ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ 'পাঠাও'এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশী বংশদ্ভুত তরুন মিলিওনিয়ার ফাহিম সালেহ (৩৪) নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন। নিউইয়র্ক পুলিশ ফাহিমের নিজের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মঙ্গলবার বিকেলে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে।
এনওয়াইপিডি পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ফাহিমের শরীরের হাত-পা, মাথা সবকিছু খণ্ড-বিখণ্ড ছিল। আমরা এগুলো পেয়েছি। ফাহিমের বোন তার কোনো খোঁজ না পেয়ে ৯১১ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ বলছে, ফাহিম সালেহ’র খুনিদের চিহ্নিত করতে তৎপরতা শুরু করেছে তারা। তারা ওই ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখেছেন। তাতে দেখা গেছে, মাথা ঢাকা ও হ্যান্ড গ্লাভস পরা সহেন্দভাজন এক ব্যক্তি ওই ভবনের লিফট ব্যবহার করেছেন।
ফাহিম সালেহ গত বছর ২.২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ম্যানহাটনের ডাউনটাউনে এই অ্যাপার্টমেন্টটি কেনেন।
নিউইয়র্ক পুলিশ ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ উদ্ধার করেছে; সেখানে দেখা যায়, সোমবার শেষবার তিনি বাসায় প্রবেশ করার পর আর বের হননি। এ সময় সন্দেহভাজন খুনি হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক ও স্যুট পরিহিত অবস্থায় ব্রিফকেস নিয়ে ফাহিম সালেহর পেছনে যেতে দেখা যায়।
ওই ব্যক্তি ফাহিম সালেহর সঙ্গে ভবনের সপ্তম তলায় তার অ্যাপার্টমেন্ট পর্যন্ত যান। এই ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন খুনি হিসেবে ধারণা করছে এনওয়াইপিডি। সোমবার থেকে ফাহিম সালেহর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে নিউইয়র্ক পুলিশকে টেলিফোনে জানান তার বোন। পরে পুলিশ ওই অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে ফাহিমের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে।
মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক পোস্ট বলছে, বাংলাদেশি এই তরুণ মিলিওনেয়ারের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে পুলিশ খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ পরে থাকতে দেখে। তার দুই হাত, হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা এবং মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন ব্যাগে ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তাক্ত ইলেক্ট্রিক করাত উদ্ধার করে। তবে অ্যাপার্টমেন্টের মেঝেতে খুব বেশি রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল না বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ।
পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি সোমবার সালেহর সঙ্গে ভবনে প্রবেশ এবং একই লিফট ব্যবহার করেন।
স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা নিউইয়র্কের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি নিউজকে বলেন, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির হাতে একটি ব্রিফকেস ছিল। তাকে অনেক পেশাদার মনে হয়েছে। বাসায় ওঠার জন্য লিফট থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালেহকে ওই ব্যক্তি আঘাত করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল বলছে, পাঠাওয়ের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা আঘাত পেয়ে মেঝেতে পড়ে যান। তাকে হত্যার পর সন্দেহভাজন ঘাতক অন্য কোনও পথ ব্যবহার করে সেখান থেকে পালিয়ে গেছেন কিনা সেটি জানার চেষ্টা করছে নিউইয়র্ক পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।
নিউইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র সার্জেন্ট কার্লোস নিভস বলেন, আমরা একটি ধড় পেয়েছি; যার শরীর থেকে হাত, পা, মাথা বিচ্ছিন্ন ছিল। সবকিছুই ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের কোনও উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
সৌদি আরবে জন্মের পর নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণ মিলিওনেয়ার গত বছর ম্যানহাটনে ২ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলারে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। এই বিলাসবহুল বাসা নিয়ে প্রতিনিয়ত ইন্সটাগ্রামে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন তিনি।
পাঠাওয়ের আদলে নাইজেরিয়া এবং কলম্বিয়ায় এমন আরও দুটি জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানিরও মালিক ছিলেন ফাহিম সালেহ।
সৌদি আরবে ১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন ফাহিম। তার বাবা সালেহ উদ্দিন বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে আর মা নোয়াখালীর। ফাহিম পড়াশোনা করেছেন ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে আমেরিকার বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকতেন নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে।