ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন করার মামলায় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং রিজেন্ট হাসপাতাল গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন।
একই মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকে ১০ দিন ও কর্মী তরিকুল ইসলামের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয় থেকে সাহেদকে আদালতে নেওয়া হয়। এ জন্য আগে থেকেই আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
সাহেদকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ডিবি। শুনানি নিয়ে আদালত ১০ দিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করেন।
সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গতকাল বুধবার ভোরে সাহেদকে গ্রেপ্তার দেখায় র্যাব। এদিন বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাহেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরে তাঁকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। রিজেন্টের জাল-জালিয়াতি অভিযোগের তদন্ত করছে ডিবি।
র্যাব জানায়, গতকাল ভোর পাঁচটার পর সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার সাকড় বাজারের পাশে অবস্থিত লবঙ্গবতী খালের সামনে থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সকাল নয়টায় হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে আসার পর তাঁকে নিয়ে উত্তরায় অভিযান চালায় র্যাব।
টিভি টক শোর নিয়মিত আলোচক ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে অসংখ্য সেলফি ও ছবি তুলে নিজেকে জাহির করতেন সাহেদ। কিন্তু কোভিড চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে শেষ পর্যন্ত ধরা খান তিনি।
৬ জুলাই র্যাব সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান পরিচালনা করে। জানা যায়, করোনার ছয় হাজার ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছে এই হাসপাতাল। হাসপাতালের লাইসেন্সও নবায়ন করেনি। সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে মামলা করে র্যাব। তারপরই তাঁকে খুঁজতে সারা দেশে তৎপরতা শুরু করে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন, ১৩ জুলাই র্যাব মামলার তদন্তের দায়িত্ব চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছে।
৬ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সাহেদ কোথায়, কীভাবে ছিলেন, কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সাতক্ষীরায় কী করে পৌঁছালেন, কার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এতটা বাড় বাড়লেন, তার জবাব পাওয়া যায়নি। এসব প্রশ্নের জবাবে র্যাব বলেছে, তদন্ত শেষ হলে বলতে পারবে। কখনো বলেছে, তদন্তের স্বার্থে এখন সব বলা যাবে না। তবে সাহেদ করিমকে ধরার আসল ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যায় তা চমকে ওঠার মতো।
সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, সাহেদ করিম কলকাতায় চলেই গিয়েছিলেন। সোমবার সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত দিয়ে তাঁকে বিএসএফ কতৃক অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে ফরৎ পাঠানো হয়েছে। এরপর থেকে তিনি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিম্মায় ছিলেন। এক দিন পর তাঁকে র্যাব দ্বারা গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সাহেদের আসল পৈতৃক বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাট। ২০০৮ সালের দিকে বহুধাপ বিপণন (এমএলএম) ব্যবসায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমান টাকা পয়সা আদায় করে চম্পট দিয়েছিলেন তিনি। সে সময়ও আশ্রয় নিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে।