DMCA.com Protection Status
title="৭

গত নির্বাচনের আগে ড.কামালের নেতৃত্বে জোট গঠন করা বিএনপির ভুল ছিলঃ খালেদা জিয়া।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক আওয়ামী লীগার এবং বর্তমানে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট(জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) করা বিএনপির জন্য বড় ভুল ছিল বলে মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।

তাঁর মতে, কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এজেন্ডাবিহীন সংলাপে যাওয়াও বিএনপির জন্য চরম ভুল ছিল।

পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত  ছাড়ার আগে আরও আলোচনার পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি। জামায়াত ছাড়ার বিষয়টি স্বল্প সময়ের চিন্তা না করে, দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন।

দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কাউকে খুশি করে স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার পক্ষে নন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। জাতীয়তাবাদী শক্তি যে যেখানে আছেন তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগোনোর পক্ষে মত দেন তিনি।

ঈদের দিন শনিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের ভাড়াবাসা ফিরোজায় দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে দেশের রাজনৈতিক নানা প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনাকালে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া।

‘ফিরোজায়’ প্রবেশের পর নেতারা পিপিই পরে দোতলায় ড্রইংরুমে বসেন। সেখানেই এ শুভেচ্ছা বিনিময় হয়।

এ সময়- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের সাজা স্থগিত করে মুক্ত হওয়ার পর প্রথম ২৫ মে ঈদুল ফিতরের দিন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ হয়েছিল।

মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাডাম এতো অসুস্থ যে বাসার নিচে নামতে পারেন না, হাঁটতেও পারেন না। তার খাওয়া-দাওয়ায়ও সমস্যা হচ্ছে। তার উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। তাকে হাসপাতালেও নেয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এতদিন ধরে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি, সবার সুখ-দুঃখের কথা বলেছি। দলের অনেক নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মী করোনাভাইরাসে মারা গেছেন। তাদের সম্পর্কে কথা হয়েছে, তাদের পরিবার-পরিজনদের নিয়ে কথা হয়েছে।

সবকিছু মিলিয়ে বলা যেতে পারে- সুখ-দুঃখের আলাপ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসকালে এবং বন্যায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন।

এছাড়া দল যাতে সঠিকভাবে চলতে পারে সেজন্য দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। খালেদা জিয়ার নির্বাহী আদেশে মুক্তির ৬ মাসের সময়সীমা প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। পরবর্তী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এটি নিয়ে এখনও বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। সময় এলে আলোচনা করা হবে।

এদিকে, খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সকালে বোন সেলিমা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দর ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা বাসায় যান।

দুপুরের খাবার খালেদা জিয়া বোনকে নিয়ে খেয়েছেন। মুক্ত হয়ে ফিরোজায় আসার পর থেকে খালেদা জিয়ার কয়েকজন স্বজন ছাড়া প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে কঠোর কড়াকড়ি রয়েছে।

স্থায়ী কমিটির নেতা ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির নেতাদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি, বন্যা পরিস্থিতির বাইরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপ করা, জামায়াতসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কথা বলেছেন খালেদা জিয়া।

আলোচনার একপর্যায়ে নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা কেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট করতে গেলেন? কেন শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে গেলেন? আবার গেছেন, আগে কেন এজেন্ডা ঠিক করলেন না?

আপনারা ড. কামাল হোসেনকে কেন জাতীয় নেতা বানালেন? কিন্তু তিনি (ড. কামাল) কবে জাতীয় নেতা ছিলেন? তিনি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কী করেছেন।? তিনি তো জাতীয়তাবাদী শক্তির কেউ নন। তার সঙ্গে তো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, আদর্শিক নয়।

তিনি তো সব সময় তার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কথাই বলেন। ড. কামাল যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতেন তাহলে তো এ সরকার থাকত না। এ সময় জোট গঠন ও নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখা তিন নেতা নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে খালেদা জিয়ার সামনে হালকা তর্কে জড়িয়ে পড়েন।

ওই তিন নেতার উদ্দেশে অপর এক নেতা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থায়ী কমিটির অর্ধেক নেতা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। ওই তিন নেতার মধ্যে একজন বলে উঠেন, এটা ছিল সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। জবাবে স্থায়ী কমিটির ওই নেতা বলেন, আপনারা আমাদের ফাঁদে ফেলেছেন।

সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াত ছাড়ার প্রশ্নে অধিকাংশ নেতা একমত পোষণ করেছেন। প্রসঙ্গটি খালেদা জিয়ার সামনে তুলে ধরা হয়। এ নিয়ে তিনি বলেন, জামায়াত ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন আছে। স্বল্প সময়ের চিন্তা না করে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে হবে।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে, বিএনপি হচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। এ দলের কাছে দেশের স্বার্থ ও জনগণ সবার আগে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এমপি, মন্ত্রী অথবা ক্ষমতায় গিয়ে কী হবে?

দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কাউকে খুশি করে গোঁজামিল দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো চিন্তা করাও ঠিক না। শুভেচ্ছা বিনিময়ের শেষ পর্যায় এসে এক নেতা খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান, আমরা শুনতে পাচ্ছি- নির্বাচনের সময়ও এ নিয়ে আমাদের দলের অনেক নেতার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটির বিভিন্ন লোকজনের কথা হয়েছে।

তা হল- জোট থেকে জামায়াত এবং দলের শীর্ষ পদ থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিলে বিএনপিকে তারা (প্রতিবেশী দেশ) ক্ষমতায় নেবে। এখন ধরলাম আমরা জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেব, এরপর যদি মাইনাস টু মানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দেয়ার কথা বলে তখন কী হবে?

ওই নেতা আরও বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অথবা দলের যে কোনো পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে দল পরিচালনায় আপনার আইডিয়া শেয়ার করুন। আপনি কারাগারে যাওয়ার পর যত সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে প্রতিটি সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষে গেছে।

এখন দেশের মানুষ, সাধারণ নেতাকর্মী, সবাই সন্দেহ করে আমাদের কী অবৈধ হাসিনা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে কিনা। খালেদা জিয়া ওই নেতার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেও কোনো জবাব না দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান শেষ করেন।

ঈদুল আজহার দিন দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানান দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!