DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

শেখ হাসিনার গত দশ বছরের শাসনামলে ৩ হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যা: মির্জা ফখরুল

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত এক দশকে তিন হাজার মানুষের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান তুলে ধরে এসব ঘটনার সুষ্টু বিচার দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

 

তিনি বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সরকারের অধীনে এ দেশে প্রায় তিন হাজার মানুষ পুলিশ, র্যা ব, ডিবির হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এদের অধিকাংশই বিরোধী দলের নেতাকর্মী।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১০ বছরে জেল কাস্টডিতে মারা গেছেন ৭৯৫ জন মানুষ, গুম হয়েছে ৬০১ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৮০৬ জন নারী, ১৯৩৪ জন শিশু নির্যাতিত হয়েছে, ১৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে এক লাখের ওপরে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে এবং সেখানে আসামি করা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখের বেশি মানুষকে। এই চিত্র বলে দেয়- লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, লাখো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতার স্বদেশ প্রিয় জন্মভূমি আজ মৃত্যু উপত্যকা, জল্লাদের রঙ্গমঞ্চ। আমরা অবশ্যই সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৯৬ জন এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং অথবা কাস্টোডিয়াল ডেথের শিকার হয়েছে। ২০১৯ সালে হয়েছে ৩৮৮ জন, ২০১৮ সালে হয়েছে ৪৬৬ জন, ২০১৭ সালে হয়েছে ১৬২ জন, ২০১৬ সালে হয়েছে ১৯৫ জন।

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাকে (সিনহা) পুলিশ হত্যা করেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। গণমাধ্যম অত্যন্ত পেশাগত দায়িত্বে থেকে এর সংবাদগুলো সংগ্রহ করে পরিবেশন করেছে। সাধারণ মানুষেরা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পায় না। গর্বিত সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজরের এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, সমগ্র জাতি যেভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে তাতে মেজর সিনহার পরিবার সাহস পাচ্ছে, বিচার প্রার্থী হতে পারছে। আমরা অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই, সব বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই চাই। এ দেশের মাটিতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সেই বিচার হবে বলে আমরা আস্থা রাখি, বিশ্বাস করি।

 

তিনি বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে যে, পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা হবে না। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা বলতে চাই ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ড ঘটানো বা না ঘটানো পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঠাণ্ডামাথার সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত। এত দিন বিএনপির পক্ষ থেকে এটাই বলে আসা হয়েছে। আমরা বারবার বলে এসেছি, ক্রসফায়ারে সাজানো গল্প মিথ্যা, বানোয়াট এবং এটা সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার নীল-নকশার অংশ। সিনহা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এতদিনের যে দাবি করে আসছি, আমরা যে কথা বলে আসছি- তা সত্য প্রমাণিত হল।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছেন যে, প্রায় প্রতিটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে, প্রতিটি পত্র-পত্রিকায় সিনহার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে যে ধরনের নাটক পুলিশ সাজিয়েছিল তা কতটা মিথ্যা এবং কতগুলো নিরপরাধ ব্যক্তিকে তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন কী চমৎকার একটা ফ্রিকশন, ক্রাইম ফ্রিকশনের একটা গল্প তৈরি করা হয়- সেভাবে গোটা বিষয়টাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে দিয়ে মূল যে দোষী ব্যক্তি তাকে আড়াল করে নেয়া হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব কিছুকেই উপেক্ষা করছে, অবহেলা করছে। কারণ তার তো সেই সামর্থ্যই নেই এগুলোকে সমাধান করার। তাদের তো ব্যবহার করেছে নির্বাচনের পূর্বে যে, রাতের অন্ধকারে ভোট দিতে হবে, প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিতে হবে এবং তাদের এখন কী করে তারা নিয়ন্ত্রণ করবে? এই ফ্যাসিস্ট সরকার এটা জনগণের জন্য পুরোপুরিভাবে একটা দানবে পরিণত হয়েছে। আমরা এ অবস্থার অবসান চাই। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নেবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।

তিনি বলেন, বিনাবিচারে মানুষ খুন-গুম কখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না। আমাদের সংবিধান এটাকে সমর্থন করে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য, ভিন্নমতকে দমন করার জন্য এ ধরনের গুম-খুন-অত্যাচার-নিপীড়ন-নির্যাতন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ ধারা-২(২)(ক) এর অধীনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

করোনাকালে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হচ্ছে। মানুষ তার অধিকার থেকে প্রতিদিন বঞ্চিত হচ্ছে। এই সরকারের জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। তার প্রমাণ আজকে কোভিড-১৯ এর আগ্রাসনের ফলে যেভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভঙ্গুর হয়ে গেল, যেভাবে মানুষের ন্যূনতম যে অধিকার স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার তা-ও ধ্বংস হয়ে গেছে। কেউ কোথাও কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, এখন হাসপাতালে করোনা বেড খালি পড়ে আছে, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসাই নেই। সেজন্য মানুষ নিজের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করাচ্ছে। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে, প্রতিদিন সংক্রমণের হার বাড়ছে। প্রতিদিন সরকারের লুটপাটেরও খবর বের হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন বিখ্যাত মানুষ মিঠু। পত্রিকায় দেখলাম সে বহাল তবিয়তে দেশ ছেড়ে বাইরে চলে গেছে। কী চমৎকার! যারা লুণ্ঠন করেছে, যারা আমাদের জনগণের কষ্টার্জিত টাকার ট্যাক্স লুট করবে তারা চলে যাবে দেশ ছেড়ে সহজেই। আর সাধারণ মানুষ যারা এখানে লড়াই করবে বেঁচে থাকার জন্য, জীবিকার জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাবে ক্রসফায়ারে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, প্রবাসীরা যারা উদায়াস্ত পরিশ্রম করছে, দেশে অর্থ পাঠাচ্ছে, রেমিটেন্স বাড়াচ্ছে- তাদের যত রকমের হেনস্তা করার আছে তারা করবে। কয়েক দিন আগে দেখলাম মালয়েশিয়াতে আমাদের কিছু প্রবাসী কর্মী ভাইদের আহাজারি। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের খোঁজ নেয়ার পর্যন্ত কেউ নেই। এ বিষয়গুলো প্রমাণ করে আসলে বাংলাদেশকে পরিচালনার জন্য এ সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা এ রাষ্ট্রকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!