DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

১৫ই আগস্টের ১০দিন আগেই শেখ মুজিবকে সর্তক করেন জিয়াঃমুজিব কান দেননি।


ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান,বীর উত্তম নিয়ে আওয়ামী মিথ্যাচার এবার চরমে উঠেছে।

বিভিন্ন ভাবে ১৫ই আগস্টের আসল খল নায়কদের আড়াল করতেই তৎকালীন উপ সেনা প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে এই হত্যাকান্ডের জন্য একক ভাবে দায়ী করা হচ্ছে।

আসল ঘটনা হচ্ছে, শহীদ জিয়া কোনো ভাবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যার সহযোগী নন !বরং তাঁকে রক্ষায় ছিলেন প্রথম সহায়তাকারী!!

শহীদ জিয়ার কথা শুনলে হয়তো বঙ্গবন্ধুর জীবনে ঘটতো না ১৫ আগষ্টের নির্মম পরিনতি!!

অভাগা এই জাতির এই এক করুন পরিনতি!! যেখানে সত্য হারায় আর মিথ্যা রাজত্ব করে!!   

একমাত্র শহীদ জিয়াই সেনাবাহিনীর ভিতর যে বঙ্গবন্ধুর সরকারের নানাবিধ অন্যায় নিয়ে ক্রমশ অসন্তোষ বাড়ছে, সেই বিষয়ে জিয়াউর রহমান ১৫ আগষ্টের ১০ দিন আগেই বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন।

অথচ আজ আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারনে, তাদের কাছে সেই শহীদ জিয়াই হলেন বঙ্গবন্ধুর খুনী! আর বঙ্গবন্ধুর খুনের ইন্ধন দাতারা হলেন আজ ওদের কাছে যেন মমতাময়ী জননী!! তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল সফিউল্লাহ,বিমান বাহিনী প্রধান এআর খন্দকার ,রক্ষী বাহিনী প্রধান তোফায়েল আহমেদ সহ অনেকেই এখনই শেখ হাসিনার নীতিনির্ধারক মহলের অংশ।অথচ দেশের প্রেসিডেন্টকে রক্ষায় চরম ভাবে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের কোর্ট মার্শাল হওয়া বাঞ্চনীয়  ছিলো।

শুধু তাই নয় শেখ মুজিব হত্যার পটভূমি সৃষ্টিকারী জাসদের কর্নেল তাহেরের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নিরব। এছাড়াও হাসানুল হক  ইনু ,রাশেদ খান মেনন,মতিয়া চৌধুরী,শাহজাহান খানের মতো লোকেরা এখন সবচেয়ে বড় মুজিব প্রেমী হিসাবে পরিচিত।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে জননন্দিত জননেতা জিয়াউর রহমানের উপর আওয়ামী লীগের ঈর্ষান্বিত রাজনীতি এবং বিএনপি’র অধিকাংশ নেতৃবৃন্দের অদূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনীতির কারনে, দেশের শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক ও শ্রেষ্ঠ দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অনেক সত্য অর্জন আজ মিথ্যার অন্তরালে হারিয়ে গিয়েছে। বিএনপি’র সিংহ ভাগ নেতৃবৃন্দই নিজেদের রাজনীতি ও মিথ্যা জনপ্রিয়তা অর্জন করার হীন মানসিকতায়, শহীদ জিয়ার শতভাগ সত্য গুলোকেও জনগনের কাছে তারা তুলে ধরতে সক্ষম হননি।

শহীদ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে সেনাবাহিনীতে বিশৃংখলা নিয়ে অবহিত করেছিলেন। সেই সাথে দেশের ভিতর গুম, হত্যা, লুন্ঠন, চোরাকারবারী বন্ধ করতে বিশেষ অনুরোধও জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু তৎকালীন আর্মি চীফ জেনারেল শফিউল্লাহ সাহেব, শহীদ জিয়ার সত্য সর্তককে “গুজব” বলে উড়িয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আশ্বস্ত করেছিলেন।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের আগেও স্বাধীনতার মাত্র ৯ মাস পর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার সমর্থনে, দেশে প্রথম বারের মত সামরিক ক্যু’র প্রচেষ্টা হয়। শেখ তখন বিদেশ ভ্রমনে জেনেভায় ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতার সেই ”ক্যু‘র” প্রচেষ্টা সেই সময় বাধা দিয়েছিলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক দেশপ্রেমিক জিয়াউর রহমান।

১৯৭৫ সালে ক্যান্টনমেন্টে অভ্যুত্থানের গুজব প্রায়শ বাতাসে ভেসে বেড়াত। শেখ মুজিবকে উৎখাত করা হবে, এমন কথা তখন ক্যান্টনমেন্টের প্রায় সবাই জানতেন। সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, শাফায়েত জামিল সবাই জানতেন। শেখ সাহেবের কানেও গিয়েছিল সে খবর। এ প্রেক্ষিতে ১৫ আগস্টের ১০ দিন আগে জিয়াউর রহমান দেখা করেন জনাব শেখ মুজিবের সাথে, এবং তাঁকে এই বিষয়টি অবহিত করেন।

আলতাফ পারভেজ রচিত “অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ, কর্নেল তাহের ও জাসদের রাজনীতি” গ্রন্থের ৮২ পাতায় রয়েছে, “১৫ আগষ্টের দশ দিন আগে জেনারেল জিয়া শেখ মজিবকে সেনা অভ্যূত্থানের আগাম খবর দিয়েছিলেন!” ১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত ‘ফার ইস্টার্ন ইকোনোমিক রিভিউ’ লিখেছিল, ‘আগস্ট অভ্যুত্থানের দশ দিন আগে শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জিয়াউর রহমান তাঁকে জানান যে, সেনাবাহিনীতে গোলমাল চলছে। শৃঙ্খলা রক্ষা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তিনি মুজিবকে চোরাচালান, মুদ্রাস্ফীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন, যাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সহজ হয়।

জিয়াউর রহমানের কথার সূত্র ধরে, শেখ সাহেব সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউল্লাকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, জনাব শফিউল্লাহ শেখ মুজিবকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, সেনাবাহিনীতে সবকিছু ঠিকই আছে !

তার কিছু দিন পরেই ঘটে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড। অভ্যুত্থানের গুজব নিয়ে সেই সময় দৃরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ জেনারেল জিয়া কথা বলেছিলেন জনাব তাজউদ্দীন আহমেদের সাথেও।

বাস্তবে ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের সঙ্গে ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়েত জামিল ও সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ জড়িত থাকতে পারে, একথা বার বার লিখেছেন তখনকার ঢাকা স্টেশন কমান্ডার কর্নেল হামিদ, (কর্ণেল হামিদ ছিলেন জেনারেল জিয়া ও জেনারেল সফিউল্লাহর কোর্সমেট)।

মেজর রশিদের টু ফিল্ড আর্টিলারী ছিল শাফায়েত জামিলের ৪৬ ব্রিগেডের অধিনস্ত একটি ইউনিট। অভ্যুত্থানে শাফায়োতের জড়িত থাকা নিয়ে কর্নেল হামিদ লিখেছেন, মেজর ফারুক-রশীদরা অপারেশন প্লানে দুর্বল রক্ষী বাহিনীর কাউন্টার-এটাক ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নিলেও, ৪০০০ সৈন্যের শক্তিশালি ঢাকা ব্রিগেডকে নিয়া কোনো প্লান রাখেনি। শক্তিশালী ঢাকা বিগ্রেডকে আমলে না নেওয়ার কারন হিসবে মেজর রশিদ জানায়, “সে তো আমাদেরই লোক” (অর্থাৎ শাফায়াত জামিল)।

তার তরফ থেকে আমরা কোনো আক্রমন-আশঙ্কা করিনি। শাফায়েত এবং তার অধিনস্থ সকল অফিসাররা ব্যাপারটা জানতো। তাছাড়া ভোর রাতে কর্নেল ফারুক ট্যাংক বহর নিয়ে বনানীর রোড ধরে না গিয়ে, বরং ৪৬ ব্রিগেডের ভেতর দিয়ে শাফায়েতের বাসার পিছন দিয়ে বিকট শব্দে এগিয়ে গেলো কোন সাহসে ? তার মানে শাফায়েতের সঙ্গে রশীদ-ফারুকের পূর্ব সমঝোতা হয়েছিল।

তাছাড়া শেখ মুজিবকে হত্যার পরে মেজর রশীদই প্রথম এসে শাফায়েতকে স্যালুট ঠুকে রিপোর্ট করে,"Sir, We have killed Shiekh Mujib(হামিদ, পৃ ৬০)।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকাল সম্পর্কে, কর্ণেল হামিদ আরো লিখেছেন, ৪৬ ব্রিগেডের প্রায় সব অফিসারই সেখানে উপস্থিত ছিল এবং তারা সবাই উল্লাস করছিল।

কর্নেল শাফায়েত জামিলও সেখানে চোখে মুখে তার বিজয়ীর হাসি হেসেছেন, যেন তার ব্রিগেডই লঙ্কা জয় করেছে। আমার সাথে সজোরে হাত মিলিয়ে বলল, দেখলেন স্যার, ফ্রিডম ফাইটারস হ্যাভ ডান ইট বিফোর, এন্ড দে হ্যাভ ডান ইট এগেইন।”

ঐ অভ্যুত্থানে সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ সাহেবও যে জড়িত ছিলেন, সেই কথা নিজেই প্রকাশ করেছেন মেজর রশিদ। অল্প কিছুদিন আগে রশিদকে যশোর থেকে বদলী করে ঢাকা এনেছিলেন খালেদ মোশাররফ।

ফারুক নিজের স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, শেখ মজিবকে হত্যা করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না তাদের, তাকে গ্রেফতার করে তাদের ‘বস’ খালেদ মোশাররফের কাছে হাজির করে মুজিবের বিচার করাই ছিল তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। ১৫ তারিখ সকালে খালেদ মোশাররফ যখন জানতে পারেন, ফারুকের ট্যাংকে গোলা নাই, তখন খালেদই গাজিপুর থেকে গোলা আনিয়ে সরবরাহ করেন। খালেদ মোশাররফ ছিলেন কর্নেল ফারুকের আপন মামা!

রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর পূর্বানুমোদিত কর্মসূচি অনুসারে ১৯৭৫ সালের ১৪ই আগস্ট রাতে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টস্থ আর্মড কোরের প্রায় ৪০০ জন সৈন্যের একটি দল সামরিক মহড়া-কাম-প্রশিক্ষণের জন্যে জয়দেবপুরের দিকে গিয়েছিল। এই দলের নেতৃত্বে ছিল লেঃ কর্নেল ফারুক। লেঃ কর্নেল রশিদ ও আটজন মেজরও এই দলটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিলো। তাদেরকে প্রদান করা হয়েছিল সীমিত অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। সঙ্গে তিনটি ট্যাংক নেওয়ারও অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল এই দলটিকে।

কিন্তু ঐ ট্যাংকগুলোতে কোন গোলাবারুদ নেয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। জয়দেবপুরে মহড়া ও প্রশিক্ষণ শেষে এই দলটি, তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমান বন্দরে এসে সমবেত হয় রাত সাড়ে তিনটার দিকে। তখন লেঃ কর্নেল ফারুক সমবেত সৈন্যদের উদ্দেশে একটি ভাষণ দেন। উক্ত ভাষণে লেঃ কর্নেল ফারুক বঙ্গবন্ধু সরকারের তীব্র সমালোচনা করে উপস্থিত সৈন্যদেরকে ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সম্মত করায় ।

কিন্তু তখন সৈন্যদের বলা হয়নি যে, বঙ্গবন্ধু বা তাঁর পরিবারবর্গের কোন সদস্য কিংবা আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা করা হবে।

ঐ সময়ে মেজর (অব:) শরিফুল হক ডালিম সামরিক পোশাকে সজ্জিত অবস্থায় সেখানে উপস্থিত হয় এবং তাদের দলে যোগদান করে।

মেজর শরিফুল হক ডালিম বেগম মুজিবকে মা বলে সম্বোধন করতেন বলে ড. ওয়াজেদ সাহেবের বইয়ের (পৃষ্ঠা-২৬৪) উল্লেখ রয়েছে। ডালিমের স্ত্রী নিম্মি ছিলেন শেখ রেহানার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সকালে শেখ মুজিবকে হত্যার খবরটি মেজর ডালিমই রেডিও-এর মাধ্যমে প্রচার করেছিলেন।

 

আওয়ামীলীগ এটা খুব ভালো করেই জানে যে, শহীদ জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার কোন কিছুর সাথেই সম্পৃক্ত নয়। তবুও তাঁরা প্রতিহিংসা বশতঃ শহীদ জিয়ার নামে অপবাদ দেয় এই কারনে যে, পুরো আওয়ামী লীগ যেখানে শতভাগ ব্যার্থ হয়েছে, এক জিয়াউর রহমান প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের ব্যার্থতা ঘুচিয়ে দিয়ে দেশ ও জাতিকে বারবার এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ নিজেদের ব্যার্থতা স্বীকার করতে চায় না বিধায়, জিয়াউর রহমানের মতন এত বড় মাপের মানুষের সাফল্য স্বীকার করা বা মেনে নেয়ার মত মানসিকতা তাঁরা স্বাধীনতা উত্তর থেকে আজ অবধি ধারন করতে পারে নাই।

মহান আল্লাহ, আপনি সকল সময়ই সত্যের পক্ষে, তাই সত্য সব সময়ই জয়লাভ করে থাকে। বাংলাদেশের এই বিতর্কিত বিষয়টিতেও আপনি অনুগ্রহ করে সত্যের জয় নিশ্চিত করে দিয়ে, জিয়াউর রহমানের প্রাপ্য সম্মান তাঁর প্রিয় বাংলাদেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। আমীন।

তথ্যসূত্র:

১. ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস অব বঙ্গবন্ধু হত্যাঃ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ।

২. তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথাঃ লে. কর্ণেল (অব:) এম এ হামিদ।

৩. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশঃ ড. এম এ ওয়াজেদ।

৪. অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ, কর্নেল তাহের ও জাসদের রাজনীতিঃ আলতাফ পারভেজ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!