ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনী এবং স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা আইন প্রণয়নের প্রবল বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন,ইতিপূর্বে রকিবউদ্দীন কমিশন এটি বাতিলের উদ্যোগ নিয়ে চরম সমালোচনার মধ্যে পড়ে এবং পরে ওই উদ্যোগ থেকে সরে আসে। প্রার্থিতা সরাসরি বাতিলের একক ক্ষমতা থেকে সরে আসা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। এতে নির্বাচন কমিশন শুধু নখ-দন্তহীন বাঘই নয়, বিড়ালে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, আমি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি। আমার মতে, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা এককভাবে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা আবশ্যক।
সোমবার অনুষ্ঠিত কমিশনের অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইন দুটির বিরোধিতা করে তিনি নোট অব ডিসেন্টে এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশনের বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পূর্ববর্তী কমিশনও এ ধরনের উদ্যোগ নিলেও সমালোচনার মুখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের তৃতীয় অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২' প্রণয়ন ও জারি করেন। এটি একটি ঐতিহাসিক আইনগত দলিল, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনন্য স্মারক। কী কারণে বা কোন যুক্তিতে এই পরিবর্তন প্রয়োজন, তা আমার বোধগম্য নয়।
নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি সবিস্ময়ে লক্ষ করেছি, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ইতিপূর্বে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ রহিত করে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আইন ২০২০ বিল’-এর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতে এই প্রস্তাবে ১১টি মৌলিক ও পদ্ধতিগত বিধান বাদ দিয়ে খসড়াটি উক্ত মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এতে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, আরপিও বা ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২'-এর ৯১ই ধারায় কোনও প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সরাসরি ক্ষমতা, যা নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত ছিল, তার বিলোপ সাধন। এই ধারাটি সব রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইন সংস্কারের যে প্রস্তাব করেছে, আমি তার সঙ্গেও একমত নই। কেবল নির্বাচন পরিচালনার জন্য ভিন্ন আইন হতে পারে না, তা সর্বজনীন হতে হবে। এতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো, মেয়াদকাল ইত্যাদি পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য নয়। বিশেষত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদ ও পদবি পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নয়। এই সংস্কার কার্যক্রম নিতান্তই স্থানীয় সরকারের বিষয়। বর্ণিত অবস্থায় আমি উল্লিখিত তিনটি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করছি।