ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে ঢুকে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করেছে। এসময় তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ (৭০) কে কুপিয়ে জখম করেছে দৃর্বৃত্তরা। তাদেরকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রংপুরে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় আশংকাজনক অবস্থায় বুহস্পতিবার ১টায় এয়ার এ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নেয়া হয় ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে।
বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার সময় ঘোড়াঘাট উপজেলা ক্যাম্পাসে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে নিরাপত্তা প্রহরী নাহিদ পলাশকে বেঁধে একটি কক্ষে আটকে রেখে ভবনের ২য় তলায় থাকা ভেন্টিলেটর খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। বাড়িতে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমকে প্রথমে কুপিয়ে জখম করে দুর্বত্তরা। এরপর তাকে বাঁচাতে তার বৃদ্ধ পিতা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ এগিয়ে আসলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে তারা। এসময় তারা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাদের অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সরকারি ওই বাড়ীতে ইউএনও ওয়াহিদা খানম, তার ৩ বছরের পুত্র সন্তান আদিয়াত ও ইউএনও’র বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ থাকতেন। ঘটনার সময় তার পাশেই ঘুমিয়েছিল ৩ বছরের শিশুপুত্র আদিয়াত।
ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের অবস্থা খুবই গুরুতর হওয়ায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা নিউরো মেডিসিন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে রংপুর মেডিকেলের নিউরো মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওয়াহিদা খানম ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা সহ চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থির মাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে গেছেন। তার স্বামী মেজবাউল হোসেন পার্শবর্তী রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর নেওয়াজ আহম্মেদ বলেন, ভোর ৬টার সময় উপজেলার স্টাফরা আমাকে খবর দেয়। তাৎক্ষণিক ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখি ইউএনও গুরুতর জখম অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে বিছানার উপরে পড়ে আছে এবং তার বৃদ্ধ বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিলেন। আমরা প্রাথমিক ভাবে রক্ত বন্ধ করার জন্য ব্যান্ডেজ করে রংপুর মেডিকেলে পাঠিয়ে দেই।
এদিকে এই ঘটনার পর সকালেই দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনসহ উদ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা এটি ডাকাতির উদ্দেশ্যে নয়, হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা চালানো হয়েছে। তবে পুরোপুরি তদন্ত না করে এটি বলা যাবে না।
ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ওয়াদুদ ভুইয়া ও পুলিশের রংপুর বিভাগীয় ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এসময় ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সিআইডি, পিবিআইসহ সরকারি অন্যান্য সংস্থারাও কাজ করছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানান তিনি।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ওয়াদুদ ভুইয়া সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনটি সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল। ইতিমধ্যে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজে ২ জনকে দেখা গেছে। এর মধ্যে একজন পিপিই পড়া ছিলো এবং অন্যজনের মুখোশ পড়া ছিলো। আমরা দ্রুততম সময়ে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি এই ঘটনাকে একটি জঘন্যতম ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।