ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ প্রতিবেশীদের প্রতি ভারতের সহযোগিতা, কূটনৈতিক তৎপরতা, মহামারি করোনা মোকাবেলায় বৈশ্বিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি রবিবার ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
এ সময় তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও প্রতিবেশী প্রথম নীতি পরিবর্তন হবে না ভারতে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স (আইসিডব্লিউএ) আয়োজিত এই আলোচনায় শ্রিংলা বলেন, ‘সম্প্রতি নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) চীনের সাথে ভারতের সংঘাত হয়েছে। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় পরে সীমান্তে এই দুর্ঘটনা ভারতের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে সামরিক এবং কূটনৈতিক চ্যানেলগুলির মাধ্যমে চীনের সঙ্গে ভারত যোগাযোগ করছে এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্ত অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছে।’
তিনি বলেন, মহামারী এবং লকডাউন বিশ্বায়নের কয়েকটি মৌলিক চালিকাশক্তিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে রূপদান করে এমন অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিশ্ববাসী ভাবতে বাধ্য হয়েছে। এটি ভারতসহ বিশ্ববাসীর চিন্তাভাবনার কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছে।
ভারতের পরামর্শ, অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নেতৃত্ব, দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে প্রশংসা পেয়েছে বলে জানান তিনি।
কূটনৈতিক গতি তৈরি এবং বজায় রাখার জন্য ভারতের প্রচেষ্টা বহুমুখী এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভারত একটি বৈশ্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দেশ। দেশটির অর্থনীতি এবং সকলের সামগ্রিক উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত। বিশ্বকে আন্তঃসংযুক্ত বাজারের সাথে সীমান্তহীন অর্থনীতি হিসাবে দেখে ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত সর্বদা একটি বৃহত্তর সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে বিশ্বাস করে। ভারতীয়দের বিশ্বাস- ‘সবার মঙ্গল সামষ্টিক কল্যাণের মাঝেই নিহিত। তারা ‘নিষ্কাম কর্ম’ নীতিতেও বিশ্বাস করে। অর্থাৎ যা কিছু ভাল তা এর নিজের প্রয়োজনেই করতে হবে।
করোনা মোকাবেলায় বৈশ্বিক পর্যায়ে ভারতের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিশন সাগর, অপারেশন সঞ্জীবনী, বেশ কয়েকটি দেশে কোভিড মোকাবেলায় মেডিকেল র্যাপিড রেসপন্স টিম মোতায়েন, স্বাস্থ্য পেশাদার এবং স্বাস্থ্য সক্ষমতা সংযোগ এগুলি কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্বাস এবং আকাঙ্ক্ষাকে উপস্থাপন করে। এই প্রচেষ্টাগুলো বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মানুষকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে। এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভারত মহামারীর মাঝে বিশ্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক অবদান রেখেছে। অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্বে এক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে। এটি ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে উন্নীত করেছে এবং মহামারী-পরবর্তী বিশ্বে স্থিতিশীল রাখবে। নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব একটি বড় ভূ-রাজনৈতিক ধাক্কা হিসাবে এসেছে এবং এটি বিশ্ব রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে। হয়ত সামনে বৈশ্বিক শক্তিতে ভারসাম্যগত পরিবর্তন দেখা যাবে। নতুন বহুপাক্ষিক কথোপকথনের উত্থান হবে এবং এই কথোপকথনে অংশীদারদের আপেক্ষিক শক্তিতে পরিবর্তন; এবং বিশ্বজুড়ে শক্তি, সংস্থান এবং ক্ষমতার বিস্তরণ ঘটবে।
এই নতুন বৈশ্বিক পরিবেশে ভারতের পছন্দ, চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলিও প্রভাবিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু জিনিস পরিবর্তন হবে না। ভারতের প্রতিবেশী প্রথমে নীতিও তেমন একটি বিষয়। ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করছে। এর প্রমাণ এই মহামারীর শুরুতেই বিশ্ব পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আঞ্চলিক ও দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের সাথে আলোচনা করেছেন। মহামারীর মধ্যে আমার প্রথম বিদেশ সফর ছিল প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশ।
প্রতিবেশী এবং এর বাইরেও সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহকারীর ভূমিকা গ্রহণ করেছে ভারত। কোভিড সংকটের এই কঠিন সময়ে বন্ধুবান্ধব এবং অংশীদারদের সাহায্য করার জন্য ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে।
আশেপাশের প্রচুর সুযোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এগুলি সমাধানে ভারত যথাযথভাবে কাজ করবে। ভারতের সক্ষমতা এবং সংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করার জন্য ভারত সর্বদা প্রস্তুত আছে বলেও জানান তিনি।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘আমি আবারও প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিতে চাই। ইকোসকের উচ্চ পর্যায়ের সভায় তিনি বলেছিলেন, ভারত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনের পথটি বহুপাক্ষিকতার মধ্য দিয়ে আসবে। পৃথিবীর বাসিন্দা হিসেবে, অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং অভিন্ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে আমাদের অবশ্যই হাত মিলিয়ে যেতে হবে। বহুপক্ষীয়তাকে সমসাময়িক বিশ্বের বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব করা দরকার। কেবলমাত্র জাতিসংঘকে সংস্কার করে নতুন বহুপক্ষীয়তার মাধ্যমে মানবতার আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ সম্ভব।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, আমরা বন্ধুদের সাথে উন্নয়ন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে সংস্থান স্থাপন করি। এটি আমাদের সদিচ্ছা এবং সক্ষমতা এবং ‘সবার সাথে সবার উন্নতি’ নীতিতে আমাদের বিশ্বাসের একটি বাস্তব প্রতিফলন। উন্নয়ন অংশীদারিত্ব একটি অগ্রগতিমূলক কাজ এবং আমরা কীভাবে অংশীদারিত্বগুলি বাড়াতে পারি এবং আমাদের বন্ধুদের অগ্রাধিকার অনুযায়ী চাহিদা পূরণ করতে পারি তার দিকে লক্ষ্য রাখছি। আমাদের লক্ষ্য থাকবে টেকসই প্রকল্পসমূহ সম্পাদন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্ষমতা জোরদার করা।’