ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম ফতুল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ী নারায়ণগঞ্জ তিতাসের ফতুল্লা অফিসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য তিতাস গ্যাসের দ্বায়িত্বহীনতার জন্যই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যাতে এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে এবং আরও অন্তত ১০ জন মৃত্যুর সাথে লড়ছেন।
গতকাল এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অবৈধ হাসিনা সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ফতুল্লা এলাকায় যারা দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে তারা হলেন ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এস এম হাসান শাহরিয়ার ও মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মো. মনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী, সাহায্যকারী মো. হানিফ মিয়া ও প্রকর্মী মো. ইসমাইল প্রধান।
নসরুল হামিদ আরও বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের সব অবৈধ গ্যাসলাইন অপসারণ করতে হবে। পরিকল্পিত এলাকার বাইরে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংযোগ দেওয়া যাবে না। অকোপ্যান্সি সার্টিফিকেট অনুসারে সংযোগ না নিলে দ্রুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অসদাচরণের জন্যই রাজনীতিবিদদের বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। কোন বিভাগের কোন কোন কর্মকর্তা অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা করা হচ্ছে। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করে পরে অভিযোগ তদন্তের ব্যবস্থা নিন। ট্রান্সমিশন লাইনের ওপর কোনো বিল্ডিং বা স্থাপনা থাকলে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। গ্যাসের বকেয়া বিল সংগ্রহের টাইম লাইন নির্ধারণ করুন। এ সময় বিলখেলাপিদের তালিকা হালনাগাদ করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের নির্দেশ দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইভিসি মিটার ও প্রি-পেইড মিটার সব গ্রাহকের জন্য স্থাপন করতে হবে। অটোমেশন করার প্রক্রিয়াও ধীরগতিতে চলছে, যা কাংখিত নয়। টাস্কফোর্সের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে হবে।
ভার্চুয়াল এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এ বি এম আবদুল ফাত্তাহ্ ও বিতরণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যু বেড়ে ২৭, হাসপাতাল ছাড়লেন একজন : বিস্ফোরণের ঘটনায় ইমরান নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৭-এ। এ ছাড়া চিকিৎসাধীন দগ্ধ মো. মামুন (৩০) সুস্থ হয়ে গতকাল হাসপাতাল ছেড়েছেন। তার শরীরের ১৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল। বাকি ১০ জন এখনো শঙ্কামুক্ত নন। এদিকে, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী মো. আল মামুন গণমাধ্যমকে জানান, যে আটজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে কেন স্থায়ী বরখাস্ত করা হবে না- তার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিসও তাদের দেওয়া হয়েছে। উপযুক্ত জবাব না দিতে পারলে তাদের স্থায়ী বরখাস্ত করা হবে।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল সাংবাদিকদের বলেন, ৩৭ রোগীর মধ্যে ২৭ জন মারা গেছেন। ভর্তি রয়েছেন ১০ জন। এদের প্রত্যেকের অবস্থাই গুরুতর। ১০ জনের মধ্যে পোস্ট অপারেটিভে রয়েছেন চারজন, আইসিইউতে ছয়জন। এদের সবার ৫০ শতাংশের ওপরে দগ্ধ হয়েছে।
শিশু জুবায়েরের বাবাও চলে গেলেন : নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় সাত বছরের শিশু জুবায়েরের পর তারা বাবা জুলহাসও মারা গেছেন। জুবায়েরের লাশ পটুয়াখালীর রাঙাবালী গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রবিবার সকালে জুবায়েরের লাশ যখন দাফনের প্রস্তুতি চলছিল তখন খবর আসে তার বাবা জুলহাসও না-ফেরার দেশে চলে গেছেন।
ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট : নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও দগ্ধ প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। গতকাল ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খন্দকার রিট আবেদনটি করেন। আবেদনকারীর আইনজীবী নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার রিটের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আবেদনে এ ঘটনায় কাদের দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে, তা নির্ধারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সেবা সংস্থা যেমন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং টেলিফোনের লাইন নিয়মিত দেখভালের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চে গতকাল সকালে রিটটি উপস্থাপন করেছি। আদালত আবেদনটি মঙ্গলবারের (আজ) কার্যতালিকায় রাখার আদেশ দিয়েছে।’