ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে যুবলীগ নেতা দেলোয়ার নেতৃত্বে একজন গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ধর্ষন এবং ভিডিও ধারনের দেশ কাপানো ঘটনায় ৯ জনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে,এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত দেলোয়ারের নাম নেই।
এছাড়া আরও তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে। রবিবার রাত ১টার দিকে এই নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ (৩৫) বাদী হয়ে প্রথম মামলাটি করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দু’দফায় অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে আটক করে। তারা হলো, একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের আবদুর রহিম (২২) এবং রহমত উল্যাহ (৪১)।
এদিকে, দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও আবদুর রহিমসহ ৫ তরুণ ওই ঘটনা ঘটায় বলে জানা গেছে। কিন্তু আসামী তালিকায় নেই ঐঘটনার মূল হোতা দেলোয়ারের নাম।
অভিযোগ রয়েছে, দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারসহ ৫ তরুণ এ ঘটনা ঘটালেও রহস্যজনক কারনে তার নাম আসামীদের তালিকায় নেই।
এজাহারে, বাদল (২২) কে প্রধান আসামী করা হয়েছে। এছাড়া রহিম (২০), আবুল কালাম (২২), ইসরাফিল হোসেন (২২), সাজু (২১), সামছুদ্দিন ওরফে সুমন (৩৯), আবদুর রব ওরফে চৌধুরী মিয়া (৪৮), আরিফ (১৮) ও রহমত উল্যা (৪১) এর নাম উল্লেখসহ ৭/৮ অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে। অথচ গ্রামবাসীদের মারফৎ জানা যায়,এই ঘটনার পর থেকে গত ৩২ দিন দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে তার পুরো পরিবারকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।
জানা গেছে, তিন বছর আগে ওই নারীর বিয়ে হয়। স্বামী তাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর থেকে তিনি বাবার বাড়িতে থাকতেন। দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ ছিল না। ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে পর অনৈতিক কাজের অভিযোগ এনে তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে গৃহবধূর ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানি করে বাদল ও তার বাহিনী। ওই সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।
একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোয়জ্জেম হোসেন সোহাগ বলেন, ‘ঘটনার পর ওই গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা জানাতে এসেছিলেন। কারা নির্যাতন করেছিল সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি। এ ঘটনার পর থেকে নির্যতনকারীদের ভয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যান।’
একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান দিপু বলেন, ‘মাদককারবারি দেলোয়ার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এ বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়েছে। দেলোয়ার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দৃটান্তমূলক শাস্তি চাই।’
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাইনি।’ তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।
বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নজরে আসে। এরপর তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জন্য বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশীদ চৌধুরী বলেন, পুলিশের ৫টি ইউনিট ৭ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে আটক করে। রবিবার সন্ধ্যায় আবদুর রহিম (২২) এবং রাত ১১টায় রহমত উল্যাহ (৪১) কে আটক করে পুলিশ। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ওই গৃহবধূকে সদর উপজেলার মাস্টার পাড়ার তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ঘটনার ৩২ দিন পর রবিবার দুপুরে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকে। তিনি প্রাণপণে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু, তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেনি। বরং হামলাকারীদের একজন তার মুখমণ্ডলে লাথি মারে ও পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেয়। এরপর একটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝেই আঘাত করতে থাকে। এসময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চেঁচায় আরেকজন।