ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস দেশের অর্থনীতির বর্তমান উত্তরণের সাথে সামঞ্জস্যহীন বলে মন্তব্য করেছেন অবৈধ হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তারা যখন কোনো দেশ সম্পর্কে বা কোনো বিষয় নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করে, সঙ্গত কারণেই এটি সবাইকে প্রভাবিত করতে পারে।”
শুক্রবার (৯ অক্টোবর) মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের জিডিপি সম্পর্কে এবার যে নম্বরগুলো বলেছেন তারা সেগুলো করোনার প্রভাবে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি শ্লথ হওয়ার শুরু থেকেই বলে আসছে এবং সেই একই জায়গাতেই তারা এখনো আছে। আমাদের অর্থবছরের তিন মাস পার হয়ে গিয়েছে এখনও ৯ মাস সময় রয়েছে। করোনার প্রভাবে যে শ্লথ গতি অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছিল সেটি এখন অনেকটা স্বাভাবিক।”
“স্বাস্থ্য ও মহামারি পরিচালনা ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সত্ত্বেও সরকারের উপযুক্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে, দরিদ্র ও দুর্বলদের জন্য মৌলিক সেবা ও পণ্যাদি নিশ্চিত করেছে। অভ্যন্তরীণ বেসরকারি ও সরকারি ব্যয়, বিনিয়োগ, রপ্তানি এবং রেমিটেন্সসহ অর্থনীতির প্রায় সকল খাত বেশ সক্ষম অবস্থানে রয়েছে,” বলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইকনোমিক ফোকাস রিপোর্টে বাংলাদেশের জিডিপিতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১.৬% হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৪%। করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়া নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা সকলেই জানি যে তাদের প্রক্ষেপণের বৈশিষ্ট্যই হলো অত্যন্ত রক্ষণশীল পদ্ধতি। বিশ্ব ব্যাংকের এ যাবৎকালের সকল প্রক্ষেপণ যদি কেউ একটি তালিকা করে তাহলে দেখা যাবে যে তারা যে প্রক্ষেপণগুলো করে তা বাস্তবতা হতে অনেক দূরে। আমরা বিশ্বাস করি তারা এবারেও সেই গতানুতিক ধারার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। আমরা আমাদের সক্ষমতার নিরিখে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি এবং তা অর্জন করি।”
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের রেমিটেন্স বাড়লেও এটি সাময়িক মনে করছে অনেকে। বৈধপথে রেমিটেন্স প্রেরণ উৎসাহিত করার জন্য আমরা যখন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি তখন অনেকেই বলেছিল রেমিটেন্সে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রণোদনার ফলে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, “বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, প্রবাসী আয় বেড়েছে, কারণ করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমার ভাই-বোনেরা ফিরে আসছেন, তাদের সব কিছু বিক্রি করে চলে এসেছেন কাজেই এই প্রবৃদ্ধি। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছেন, ২% নগদ প্রণোদনা এবং রেমিটেন্স পাঠানোর নিয়ম-কানুন সহজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের কথা। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বাড়িয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা করোনা আসার আগে থেকেই। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শুরু থেকেই যখন করোনা ছিল না, রেমিটেন্স প্রবাহে ছিল ঊর্ধ্বগতি, তাই আগামীতে এ ধারা অব্যাহত নাও থাকতে পারে এমন ভাবনা যৌক্তিক নয়।”
তিনি বলেন, “২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনু্ষ্ঠানে বিতর্কের মধ্যেই আহ্বান জানিয়েছিলাম ‘ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশকে নাও চিনে। ও পৃথিবী তোমায় জানাই, স্বাগতম এই দিনে।’ বাংলাদেশের সক্ষমতা ও অর্জন নিয়ে বিদ্যমান বিতর্ক দেখে এখনও আবার সংশ্লিষ্টদের বলতে ইচ্ছে করে আসুন চিনে নিন এক অন্যরকম নতুন বাংলাদেশ।”
দেশের মানুষকে উদ্দেশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বার বার আমরা বলেছি এদেশের মানুষ এদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি, তারাই আবার প্রমাণ করবে বিশ্ব ব্যাংক যে প্রক্ষেপণ করেছে তা সামঞ্জস্যহীন এবং ভূল। সাহসী বাঙ্গালি জাতি অতীতেও বার বার প্রমাণ করেছেন, এবারেও পারবেন।”