ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সুশৃঙ্খল রাষ্ট্র গড়ে তোলার ভাবনা থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক। এর জন্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করাকে তৎকালীন রাজনীতিবিদদের জন্য ‘লজ্জার বিষয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) প্রাঙ্গণে আজ রোববার বিকেলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নুরুল হক এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ডাকসু ‘বঙ্গবন্ধুর সংস্কৃতি ভাবনা ও স্বাধীনতার গান’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নুরুল হক বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে সুন্দরভাবে বিনির্মাণ করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যুদ্ধের ডামাডোল মাত্র শেষ হয়েছে, মানুষের হাতে অস্ত্র আছে। সেই জায়গা থেকে কীভাবে সুশৃঙ্খল একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়, সেই ভাবনা থেকে তিনি বাকশাল গঠন করতে চেয়েছিলেন।
ডাকসু ভিপি নুরুল আরও বলেন, ‘বাকশাল গঠনে যদি কোনো ভুল থেকে থাকে, আমার মনে হয় তখন যাঁরা রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের ছিলেন, যাঁরা তাঁকে মুজিব ভাই বলে সম্বোধন করতেন, তাঁরা চাইলে তাঁর সঙ্গে বসে আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে আরও সম্পাদনা, বর্জন-পরিমার্জন করতে পারতেন। কিন্তু এর জন্য এমন একজন নেতাকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে, এটি আমাদের এবং ওই সময়ের রাজনীতিবিদদের জন্য একটি লজ্জার বিষয়।’
ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন অলরাউন্ডার। তাঁর আদর্শের সৈনিক হতে হলে আমাদের রাঁধতেও হবে, চুলও বাঁধতে হবে। সকল কাজের কাজি হতে হবে। শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অনুরাগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এমন কোনো আচরণ করে, যা শিল্প-সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে অন্তরায়, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে অবশ্যই তা প্রতিহত করা হবে।’ ডাকসুর বাজেট বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ৪০০ ভাগের মাত্র ১ ভাগ ডাকসুর জন্য বরাদ্দ। ২৮ বছর ডাকসু বন্ধ ছিল, কিন্তু ডাকসু ও হল সংসদের জন্য শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়েছেন। সেই টাকার হিসাব আমরা চাইছি না, ডাকসুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের ১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হোক।’
ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘মোরাল পুলিশিং’ না করার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা জানেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে নিজেদের জীবন যাপন করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের নীতি, ধর্ম কিংবা সাংস্কৃতিক পুলিশি চলবে না। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা নিশ্চিতের জন্য আমরা সোচ্চার থাকব।’
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান। নিজের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সমন্বিত করে নানা ধরনের সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করবে, ডাকসুর কাছে এটাই প্রত্যাশা ছিল। বঙ্গবন্ধু যেসব গান শুনতেন, সেগুলো ছিল আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতার চেতনার গান। গানগুলোতে বাঙালি সংস্কৃতির উদারনৈতিক চেতনার ছাপ থাকত।’
ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন ও ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো। ১৭/৯/২০১৯।