ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ করোনাভাইরাসের টিকার জন্য যে ভ্যাকসিনটি কম দামে দ্রুত পাওয়া যাবে, সেটিই বাংলাদেশে আনা হবে বলে জানিয়েছেন অবৈধ হাসিনা সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।
তিনি বলেন, অতি শীঘ্রই স্বল্পমূল্যে, আবহাওয়ার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ভ্যাকসিন সরকার আমদানি করবে এবং বাংলাদেশের সব মানুষ সময় মতো ভ্যাকসিন পাবে।
রোববার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সোসাইটি অব সার্জন বাংলাদেশ আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ দুর্যোগে সার্জনদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।
সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ (এসওএসবি) ‘কোভিড-১৯ দুর্যোগে সার্জনদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এই কৃতিত্ব দেশের চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। তাদের কাজের কারণেই এই সফলতা এসেছে। করোনায় বিশ্বের বহু উন্নত দেশ কাবু হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার সীমিত জনবল ও প্রযুক্তি নিয়েও সকলের পরিশ্রমে অন্য দেশের চেয়ে অনেক ভালো আছে।
প্রধানমন্ত্রী এখন প্রতিটি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিভাগের সফলতার প্রশংসা করেন উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে মৃত্যুর হার কেমন। আমাদের ১৮ কোটির মধ্যে মাত্র ৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। আমেরিকার জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি মানুষ মারা গেছে। ইউরোপের চার-পাঁচ কোটি জনসংখ্যার মধ্যেও অনেক মানুষ মারা গেছে। এসব তুলনা করলে বুঝতে পারি আমরা কোন অবস্থানে আছি। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেন। অনেকে নেতিবাচক কথা বলে, কিন্তু আমরা পিছপা হইনি। দেশের জন্য কাজ করে গেছি।’
এসময় ১৫ দিনে ২ হাজার চিকিৎসক ও ৪ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়াকে মাইলফলক ও প্রধানমন্ত্রীর সময়পযোগী সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য দিক নির্দেশনায় আমার করোনার ধাক্কা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। অনেক উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কার্যকরী প্রমানিত হয়েছে। এ রকম একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশেও আমার এ রোগের বিস্তার এবং ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রন করতে পেরেছি এবং মৃত্যুহার আমাদের দেশে অতি নগন্য। যদিও একটি অনাকথিত মৃত্যু বেদনাদায়ক। তবুও আমাদের সফলতা কম নয়।’
জনগণ টেস্ট করাতে না আসায় করোনা টেস্টের সংখ্যা কম হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের করোনা টেস্টের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মানুষ টেস্ট করতে আসে না। আমি বলব আপনারা আসুন টেস্ট করুন। নিজে ও পরিবার নিয়ে সাবধানে থাকুন।’
এসময় সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সামনে শীতকাল আসছে। এসময় করোনা দ্বিতীয় ঢেউ বা সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরোপ আমেরিকায় শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে যেনো সংক্রমণ না বাড়ে প্রধানমন্ত্রী সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন। এ সময় বিয়ে সাদি বেশি হয়, পিকনিক বেশি হয়। সাধারষ মানুষ কক্সবাজারে বেশি যায়। এছাড়া সামনে পূজা আছে, শীতে ওয়াজ মাহফিল হয়, যার কারণে সংক্রমণ বাড়তে পারে। এসকল অনুষ্ঠান সীমিত, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। অল্প দিনের মধ্যেই জানা যাবে আমরা করোনার কোন ভ্যাকসিনটি নিতে যাচ্ছি, নিতে পারব। এটাও মনে রাখতে হবে, যে ভ্যাকসিনটি সুলভমূল্যে পাওয়া যাবে, তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে এবং এই দেশে ভ্যাকসিনটির সক্ষমতা মিল রেখে ভ্যাকসিনটি আনা হবে।’
দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গ্লোব বায়োটেকের টিকাটি ইতিমধ্যে ট্রায়াল-২ শেষ করেছে বলে জানা গেছে। এটি যদি কার্যকর হয়, তবে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। কোন ভ্যাকসিনটি নেওয়া হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। কোনো কোনো উৎপাদক বলছে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির দিকে হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মে-জুনের দিকে ভ্যাকসিন আসতে পারে।
সেমিনারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘কোভিড মোকাবিলায় সেকেন্ড ওয়েভ (দ্বিতীয় ঢেউ) নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেটির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতিও আছে। যদি সত্যি সেকেন্ড ওয়েভ আসে আমরা সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করতে পারব।’
সভাপতির বক্তব্যে সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশের (এসওএসবি) সভাপতি এ এইচ এম তৌহিদুল আলম বলেন, করোনার সময়ে মহামারি এলেও চিকিৎসকেরা দায়িত্ব পালন করেছে। তাঁরা ভবিষ্যতেও এভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পরে অনেক মেডিকেলে কলেজে সার্জনের নতুন পদ তৈরি হয়নি। অনেক মেডিকেলে কোর্স বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষক নেই বলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়লেও শিক্ষক নেই। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সেমিনারের শুরুতে করোনায় মারা যাওয়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি এম ইকবাল আর্সলান বলেন, কোভিড মোকাবিলায় চিকিৎসক সমাজ যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। করোনার সময়ে চিকিৎসার ত্রুটি, বিচ্যুতি, সমালোচনা ও সমন্বয়হীনতা অনেক কিছু ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগুলো সামলানো সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা আসার পর যেসব দেশ প্রথমে নিয়ন্ত্রণ করেছে, সেসব দেশে আবার করোনা বেড়েছে। এদিকে দেশে শীতের মাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে আবার একটা ঢেউ আসতে পারে। সে নিয়ে প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, করোনার সময়ে চিকিৎসকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। তবে তাদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। বিএমএ সাধারণ সম্পাদক মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, করোনায় সারা দেশে ১০২ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। তবু চিকিৎসকরা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মো. আবদুল আজিজ, সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশের সহ সভাপতি এ জেড এম মোসতাক হোসেন, স্বাচিপ সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ প্রমুখ বক্তব্য দেন।