ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ডাকসুর ভিপি নুর (ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর) সাহসী ছাত্রনেতা। সে সত্য কথা বলছে। সত্য যে বলবে, আমরা তাঁকেই সমর্থন দেব।’
বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়ি এলাকায় নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে তিনি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘এ দেশ এখন শুধু গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে চলছে। সরকারের এই পর্যবেক্ষণ একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত চলে গেছে।’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন ও নেতৃত্বের বিষয়ে তিনি অভিযোগ করেন, ‘এখন এলাকার ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পেতেও লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এটা অশনিসংকেত।’ সরকারের উন্নয়নের গল্প সব শুভংকরের ফাঁকি বলে দাবি করেন তিনি।
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে এমন খারাপ সময় আর কখনো আসেনি বলে দাবি বিএনপির মহাসচিবের। তাঁর ভাষায়, ‘১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এমন খারাপ অবস্থা ছিল না। তখন বিচার পাওয়া যেত। এখন সেটাও পাওয়া যায় না।’
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ সব সময় অত্যন্ত সুন্দর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করি। আমাদের এখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই স্বাধীন ও মুক্তভাবে ধর্ম পালন করতে পারেন। দুর্গোৎসবে আমরা প্রার্থনা করছি—বাংলাদেশে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব অটুট থাকে।’
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (ডব্লিউইও) প্রকাশ করেছে। সেখানে ২০২০ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকা তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আছে। সে সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি আসলে কার? প্রবৃদ্ধি কিসের? পাশ্চাত্যের অর্থনীতিবিদেরা জিডিপিকে প্রবৃদ্ধি বলেন। সেটাকেই তাঁরা উন্নয়ন বোঝাতে চান। কিন্তু জিডিপি বা উন্নয়নের সুফল কারা পাচ্ছে? এ জিনিসটা কিন্তু তাঁরা উল্লেখ করেন না। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা জরিপে বলছেন, এখানে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। উন্নয়নের যে সফলতা এক শ্রেণির মানুষের কাছে পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এটা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন হয় না। খেটে খাওয়া মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। জিনিসের যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে যদি মানুষের আয় না বাড়ে সে ক্ষেত্রে প্রকৃত আয় কমে যায়। এখানে দরিদ্র মানুষের সঙ্গে ধনীদের আয়ের ব্যবধান খুবই ভয়াবহ। এখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে ধোঁকাবাজি চলছে। দুর্নীতি এখন সর্বজনীন হয়ে গেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ, জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবুনুর, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে মির্জা ফখরুল পৌরসভা ও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ও শুখানপুকুরি এলাকায় সম্প্রতি মারা যাওয়া দলের নেতা-কর্মী ও তাঁদের স্বজনদের কবর জিয়ারত করেন। পরে তিনি সেসব এলাকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো।