DMCA.com Protection Status
title="৭

হাসিনা সরকারের অধীনে আর কতো প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি???

দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ  হাসিনা সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ সঠিক কি না, তা নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনা শুরু করেছে বিএনপি। ভোটে না যাওয়ার জন্য দলের ওপর তৃণমূলেরও চাপ বাড়ছে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকারের ভোটের প্রতিটিতে দলীয় প্রার্থীরা পরাজিত হচ্ছেন। অধিকাংশেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়া মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। সব নির্বাচনেই কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটের মাঝপথে বর্জন কিংবা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ভোট নিয়ে এখন লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে দলটি। আগামী শনিবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনার জন্য এজেন্ডায় রাখা হয়েছে।

তৃণমূল নেতারা জানান, নির্বাচনে অংশ নেয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাকর্মীরা যারা মাঠে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আবারও মামলা দেয়া হয়েছে। যে কারণে তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনাও ঘটছে। যে কারণে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত অনেক নেতাকর্মী। আবার ভোট বর্জনের ঘটনা এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনে ভোট চাইতে গেলে ভোটাররাও বলছেন বিএনপি তো ভোটে থাকবে না। ভোট কারচুপি করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে জয়ী করা হবে-সে বিষয়ে জনগণও জানে। তাই বিএনপির নির্বাচনে যাওয়াকে তারা ‘হাস্যকর’ বলছেন। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ তারা বারবার উন্মোচন করতে চান বলেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া তাদের ধারণা নির্বাচনকে ঘিরে মাঠের রাজনীতিতে গতি ফিরে আসতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, নির্বাচনে যাই এই কারণে যে, আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সরকার পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে নির্বাচনে গিয়ে বারবার প্রমাণ করতে চাই, এই সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, হয় না। নির্বাচনের নামে যে তামাশা হচ্ছে, তা দেশের জনগণ দেখছে। বিদেশিরাও দেখছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল: এই সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু তারপর গত দুই বছরে সংসদের দুটি ছাড়া সব কটি উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। আগামী ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনেও প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটের দিন ‘কারচুপির’ অভিযোগ এনে দুপুরে বর্জনের ঘোষণা দেন ধানের শীষের প্রার্থী। তিনি পান ৪ হাজার ৫১৭ ভোট। এদিন অনুষ্ঠিত ঢাকা-৫ উপনির্বাচনেও ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন এ আসনের বিএনপি প্রার্থী। তিনি ভোট পান ২ হাজার ৯২৬। দৃশ্যত ফলাফল কী হবে তা জেনেও সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। এত কিছুর পরও দলটি কেন বারবার নির্বাচনে যায়-এ প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। এমনকি এ নিয়ে এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও বিভক্ত।

নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি গঠিত ‘নির্বাচন পরিচালনা কমিটির’ আহ্বায়ক ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। পাবনা-৪ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিবও ছিলেন। তিনি বলেন, শুধু শুধু অর্থ ও নিজের শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, ফলাফল যেখানে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, সেখানে এসব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পক্ষে আমি না। এতে কর্মীরা উজ্জীবিত হওয়ার তো দূরের কথা, তারা আরও হতাশ হচ্ছেন। আসলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা যারা জেলে যাওয়ার ভয়ে কিংবা মামলার ভয়ে সরকারকে খুশি করার জন্য নির্বাচনের নামে যে একটা ‘নির্বাচনের খেলা’ খেলছি, এটা সাময়িক। এতে দলই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সরাসরি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন-এটা তো প্রমাণিত।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে যদি ভোট কারচুপি, জালিয়াতি ও এজেন্ট বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে, তবে বর্তমান সরকার ও বিদ্যমান নির্বাচন কমিশনের অধীন আর কোনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। বরং আগাম নির্বাচনের দাবিতে দলটি আন্দোলনে নামার চিন্তা করছে।

আর ওই দাবির সঙ্গে যুক্ত হবে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবি। তবে আপাতত স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন বর্জন করবে না দলটি।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন: প্রথমত, নির্বাচনে অংশ নেয়া হচ্ছে একটা সিস্টেমের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকা-তা প্রমাণ করা। অর্থাৎ যা খুশিই হোক আমরা এটায় অংশগ্রহণ করব। দ্বিতীয়ত, যেভাবে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে, তাতে নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা হতাশা এসেছে। তারা মনে করছে, আমরা এই যন্ত্রণার বারবার কেন মুখোমুখি হচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ও আছে, আবার আমি সম্মান জানিয়েই গেলাম, তা-ও আছে। এই জানাতে জানাতে তো আমাদের অবস্থা খারাপ। এ নিয়ে দীর্ঘদিন দলে আলোচনা হচ্ছে। এখন তা আরও জোরালো হচ্ছে। শিগগির একটা সিদ্ধান্তে আসার সম্ভাবনা আছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!