ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিদেশি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বিদেশি নেতারা তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। কিন্তু সেসব বার্তা তাকে দেখতে দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া নিয়মানুযায়ী, প্রেসিডেন্টের দৈনন্দিন গোয়েন্দা ব্রিফিংয়েও বাইডেনকে জানানো হচ্ছে না। খবর বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স ও এপির।
সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের ফল দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও মেনে নেননি। তবে জোরেশোরে সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ক্ষমতা গ্রহণের লক্ষ্যে ট্রানজিশন টিম গঠনের পর এবার তিনি ঘর গোছানোর দিকে নজর দিয়েছেন। এরইমধ্যে নতুন চিফ অব স্টাফ হিসেবে ঘনিষ্ঠ রন ক্লেইনকে তিনি মনোনীত করেছেন। ১৯৮০-এর দশক থেকে বাইডেনের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন ক্লেইন।
সাধারণ নিয়মানুযায়ী, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর নতুন প্রেসিডেন্টের সব ধরনের যোগাযোগের ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, ফলাফল ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক দেশ নতুন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠাতে শুরু করে। তখন পররাষ্ট্র দফতর নতুন প্রেসিডেন্টকে সহায়তা করে। কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার না করায় তার প্রশাসন পররাষ্ট্র দফতরে বাইডেনের প্রতিনিধিদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এ কারণে বিদেশি নেতাদের বার্তা হাতে পাচ্ছেন না তারা। তবে বাইডেন শিবির পররাষ্ট্র দফতরের সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই বিদেশি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এরইমধ্যে অনেক বিদেশি নেতার সঙ্গে কথাও বলেছেন বাইডেন।
পররাষ্ট্র বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বাইডেন টিম পররাষ্ট্র বিভাগের রিসোর্স ব্যবহার করতে আগ্রহী। কিন্তু এসব সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। কোনো একজন প্রার্থীর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার প্রথম অধিকার হল-প্রেসিডেন্টের জন্য গোয়েন্দাদের দেয়া দৈনন্দিন ব্রিফিং পাওয়া। কিন্তু বাইডেনকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এদিকে রিপাবলিকান সিনেটর জেমন ল্যাঙ্কফোর্ড বলেছেন, এগুলো না পাওয়ায় বাইডেনের কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু তিনি এগুলো পাওয়ার দাবিদার। ওকলাহোমার সিনেটর ল্যাঙ্কফোর্ড আরও বলেন, শুক্রবারের মধ্যে বাইডেনকে গোয়েন্দা ব্রিফিং দেয়ার বিষয়ে কোনো উন্নতি না হলে তিনি পদক্ষেপ নেবেন এবং কথা বলবেন।
ঘর সাজানো শুরু : মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পথে থাকা বাইডেন ঘর সাজাতে শুরু করেছেন। তার পরিকল্পনা মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ মন্ত্রিসভা গড়ে তোলা। এমনকি নতুন মন্ত্রিসভায় কয়েকজন রিপাবলিকান রাজনীতিবিদও ঠাঁই পেতে পারেন। ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্ত্রিসভায় কে কে থাকছেন-সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পদের জন্য বাছাই করা নামগুলো নিয়ে বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে।
বুধবার হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ পদে ঘনিষ্ঠ মিত্র রন ক্লেইনকে নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন জো বাইডেন। ক্লেইন এক সময় সিনেটের জুডিশিয়ারি কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিফ অব স্টাফ হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরেরও চিফ অব স্টাফ ছিলেন ক্লেইন। ফলে কাজের সুবাদেই হোয়াইট হাউসের অন্দর সম্পর্কে ভালো ধারণা রয়েছে তার।
বাইডেনের ট্রানজিশন দলের একটি বিবৃতিতে বলা হয়: ক্লেইনের কাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন নতুন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, হোয়াইট হাউসে ক্লেইনের মতো বিচিত্র অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও রাজনৈতিক পরিসরে কাজ করতে সমর্থ ব্যক্তির প্রয়োজন রয়েছে। হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ মূলত প্রেসিডেন্টের দৈনন্দিন কাজের তালিকা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন। তাকে প্রেসিডেন্টের ‘গেটকিপার’ বা দ্বাররক্ষী হিসেবে বর্ণনা করা হয়। হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ নিয়োগের বিষয়টি রাজনৈতিক এবং এ নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। এদিকে বাইডেনের নির্বাচন বিষয়ক অন্যতম উপদেষ্টা ক্লেইন এক বিবৃতিতে বলেন, তার ওপর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আস্থা রাখায় তিনি সম্মানিত বোধ করছেন।
নতুন মন্ত্রিসভায় সুসান রাইস অথবা সিনেটর ক্রিস কুনসকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অ্যান্থনি ব্লিংকেনকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, মাইকেল ফ্লারনিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, অ্যালেজান্দ্রা মায়াকাসকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক মন্ত্রী, সিনেটর ডিউগ জোন্সকে অ্যাটর্নি জেনারেল, সারা নেলসনকে শ্রমমন্ত্রী, বিবেক মূর্তিকে স্বাস্থ্য ও মানবসেবামন্ত্রী, রান্ডি উইসগার্টেনকে শিক্ষামন্ত্রী, পিট বুটিগেগকে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত করা হতে পারে। এ ছাড়া সারাহ ব্লম রাস্কিন, লিসা মোনাকো, স্যালি ইয়েটসের নামও আসছে নানা পদে।