ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দলের প্রতি পূর্ন আনুগত্যে থাকার শর্তে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে ক্ষমা করে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শোকজের জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে গত সপ্তাহে এ বিষয়ে তাকে চিঠি দিয়ে দলের অবস্থান জানানো হয়। তবে আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদের ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি। তার কর্মকাণ্ড আরও পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে হাইকমান্ড।
সূত্র জানায়, চিঠিতে দলের প্রতি আনুগত্য থাকার বিষয়ে শওকত মাহমুদকে অবহিত করা হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতে দলের কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে না যাওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। চিঠি দেয়ার কথা গনমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
জানতে চাইলে মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ বলেন, দায়িত্ব পালনে অপারগতা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ সম্পর্কিত কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব ১৯ ডিসেম্বর দিয়েছি। এরপর দলের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর পাইনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক জানান, হাফিজউদ্দিনের বিষয়ে আরও সময় নিতে চান তারা। অতীতসহ তার বর্তমান কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি কী চান তা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনা করে হাইকমান্ড সন্তুষ্ট হলে তাকেও চিঠি দিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে।
ওই নীতিনির্ধারক আরও বলেন, শোকজের বিষয়ে হাফিজউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সে অধিকারও তার আছে। কিন্তু লিখিত জবাবের শেষে তিনি দলের জাতীয় কাউন্সিলের আহ্বানসহ চার দফা সুপারিশ করেছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় যারা জিয়া পরিবারের পাশে ছিলেন তারা এ বিষয়টি আবারও সন্দেহের চোখে দেখছেন। যারা ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে দল ভাঙার চেষ্টা করেছেন, তার সুপারিশকে অনেকে সেভাবে দেখছেন।
১৯ ডিসেম্বর হাফিজউদ্দিন আহমদ বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শোকজের লিখিত জবাব দেয়ার কথা জানান। এ সময় তিনি আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান, দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি বাণিজ্য এবং মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তসহ চার দফা সুপারিশ পেশ করে বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সভা হয়নি। বক্তব্য রাখার কোনো সুযোগ পাইনি। তাই নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বিএনপির একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে সুপারিশ পেশ করছি।’
আরেকটি সূত্র জানায়, হাফিজউদ্দিনের শোকজে দলীয় দায়িত্ব পালনে অপারগতা, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্য এবং দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রতি অবজ্ঞা ও অসম্মানসূচক বক্তব্য প্রদানসহ ১১টি বিষয়ে লিখিত জবাব জানতে চাওয়া হয়। তিনি (হাফিজউদ্দিন) তার জবাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানাবেন এমন সিদ্ধান্ত নেন, কথাও বলেন। কিন্তু সে সময় এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলতে তাকে বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা অনুরোধও করেন। এমনকি দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এ বিষয়ে তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করে কথাও বলেন। কিন্তু অনুরোধ না রাখায় এই ভাইস চেয়ারম্যানের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছে দলীয় হাইকমান্ড।
দলের আরেকজন নীতিনির্ধারক জানান, কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কিংবা ক্ষমা সব সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার দলের চেয়ারম্যানকে গঠনতন্ত্রে দেয়া আছে। যেহেতু এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রয়েছেন, তিনিই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে তা জাতীয় স্থায়ী কমিটির অনুমোদন পেতে হয়। কিন্তু এখন করোনার কারণে স্থায়ী কমিটির সভা ভার্চুয়ালি হচ্ছে। তাই কোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদনের সুযোগ নেই। যখন সরাসরি উপস্থিত হয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করবেন তখন অনুমোদন নেয়া হবে।
দলের গঠনতন্ত্রের ৫ এর ‘গ’ ধারায় ‘সদস্যদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা’র বিষয়ে বলা আছে, ‘কোনো কারণে স্থায়ী কমিটির সভা আহ্বান করা সম্ভব না হলে জরুরি প্রয়োজনে দলের চেয়ারম্যান নিজ বিবেচনায় শাস্তিযোগ্য মনে করলে যে কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে যে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ এবং পূর্বে নেয়া যে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করতে পারবেন। তবে যত শিগগির সম্ভব জাতীয় স্থায়ী কমিটির অনুমোদন নিতে হবে।’ আবার গঠনতন্ত্রে ‘৭’ নম্বর ধারার ‘খ’ উপধারার ‘দলের চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্ব’র অংশের ২ এ বলা আছে, ‘কমিটিসমূহের সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও চেয়ারম্যান প্রয়োজনবোধে নিতে পারবেন।’
এদিকে বিএনপি গঠিত মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি বরিশাল বিভাগীয় উদযাপন কমিটিতেও রাখা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজউদ্দিন আহমদকে। তবে রোববার গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় উদযাপন কমিটির প্রথম সভায় তাকে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাফিজউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, সভার বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি।
দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ১৪ ডিসেম্বর দলের দুই ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদকে শোকজ করে বিএনপি। শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয় এবং হাফিজউদ্দিনকে পাঁচ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। দুই ভাইস চেয়ারম্যানই নির্দিষ্ট সময়ে শোকজের জবাব দেন।