ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেছেন,কোনো অপরাধীর জায়গা বাংলাদেশ ছাত্রলীগে হবে না। অপকর্মে জড়িত থাকায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদেরও বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিচার হচ্ছে। একটাই বার্তা- অপরাধ যে করবে তার পাশে ছাত্রলীগ থাকবে না। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। তার বিরুদ্ধে আমরাও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। সোমবার ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গনমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
আল নাহিয়ান খান জয় আরও বলেন, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার হল- গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা কাজ করে যাব। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ জন্মলগ্ন থেকে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছে। করোনাভাইরাস মহামারীকালেও সাধারণ মানুষের পাশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়েছেন। তারা মৃতদেহ সৎকার করেছেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণসহ করোনাকালে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার সব কৌশল আমরা অবলম্বন করেছি। কোথাও অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব দেখা দিলে আমাদের নেতাকর্মীরা বিনামূল্যে সেটি সরবরাহ করেছেন। বোরো মৌসুমে হাওরাঞ্চলে ধানকাটা শ্রমিকের অভাব দেখা দিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বাড়িভাড়াসহ আর্থিক সমস্যাসহ তাদের পাশে থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। সারা দেশে প্রতিটি ইউনিট এ কাজগুলো করেছে।
ছাত্রলীগ সভাপতি জয় বলেন, একটা বিশেষ প্রেক্ষাপটের পর আমরা দায়িত্ব পেয়েছি। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আমরা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পাই। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগকে গতিশীল করতে ও অতীত ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে কাজ করছি। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে আমাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেয়া হয়।
জয় বলেন, ১১১টি ইউনিটের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিই বেশি। জেলা কমিটি ১ বছর মেয়াদি এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ২ বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। সেই দিকটি বিবেচনা করলে আমাদের অধিকাংশ জেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা ১১টি ইউনিটে নতুন কমিটি দিয়েছি। ৯টি ইউনিটের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেছি। আরও বেশ কয়েকটি ইউনিটে নতুন কমিটি ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা বন্ধ রেখে মানবিক কার্যক্রমকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা অতীতের মতো সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়ের প্রয়োজনে সেটি করেছি।
আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল কমিটি করা যায়নি। তবে যেসব শাখায় কাউন্সিল হয়েছে সেসব জায়গায় নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দেব। এক্ষেত্রে সংগঠনের অন্য নেতাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা হচ্ছে। করোনার কারণে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে।
ছাত্রলীগের শূন্য পদ এবং সেসব পদ পূরণ সম্পর্কে জয় বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল বিতর্কিত কিছু বিষয়ের সমাধান করা। এ প্রেক্ষাপটে আমরা ৩২ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে আমাদের কিছু কেন্দ্রীয় নেতা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। ফলে ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৫০টি পদ খালি আছে। এ জায়গাগুলো খুব শিগগিরই পূরণ করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে যারা রাজনীতি করছেন, সংগঠনকে যারা ভালোবাসেন তাদের মধ্য থেকে নতুন নেতৃত্ব আসবে।
শূন্য পদ পূরণে এত দেরি কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, দেরি হচ্ছে এমন নয়। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ বাঁচা-মরা নিয়ে চিন্তায় ছিল। এ আতঙ্কের মধ্যেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করেছেন। পদ থাকলে কাজ করেছেন, পদ না থাকলে কাজ করেননি- বিষয়টা এমন নয়। করোনাকালে আমরা সাংগঠনিক কাজে হাত না দিয়ে মানবিক কার্যক্রমগুলোতে অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। নেত্রীর নির্দেশনাও ছিল মানুষের পাশে থাকা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদগুলো পূরণ করার জন্য আমরা কাজ করছি।
বর্তমানে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি দেয়া হচ্ছে- তাহলে করোনার মধ্যে কেন শূন্য পদ পূরণ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেয়া গেল না- এমন প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, একটি জেলা বা ইউনিটের কমিটি করার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে। একটি জেলা কমিটিতে যোগ্য নেতৃত্ব আনার জন্য অনেক বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে হয়। সাংগঠনিক ফোরাম ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন আওয়ামী লীগের সঙ্গে পরামর্শ করে যোগ্যদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে হয়। করোনাকালে এ কাজগুলোতে বিঘ্ন ঘটে। এছাড়া করোনার মধ্যে সম্মেলন করাও সম্ভব হয়নি।
কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি জয় বলেন, ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী করোনার মধ্যে যার যার এলাকায় কাজ করেছেন। দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়ে গঠনতন্ত্রে কোথাও কিছু লেখা নেই। এরপরও অতীতে দায়িত্ব বণ্টনের কাজ হয়েছে আমরাও করব। এ সপ্তাহে সাংগঠনিক ইউনিটগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হবে।
বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ কতদিন আছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের নেতৃত্ব নির্বাচনে তার সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেন। তিনি (শেখ হাসিনা) যে সিদ্ধান্ত দেন সেই আলোকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিচালিত হয়। নেত্রী যে নির্দেশনা দিচ্ছেন সেগুলো আমরা পালন করে যাচ্ছি। যে কোনো সময় সম্মেলন করতে আমরা প্রস্তুত আছি। যখনই তিনি নির্দেশনা দেবেন, তখনই সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বের কাছে দায়িত্ব তুলে দেব।
দুই বছর মেয়াদি কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ কতদিন আছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। কারণ নেত্রী সম্মেলনের সিদ্ধান্ত দেন। কোন সময়কে মেয়াদকাল হিসেবে ধরছেন?- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটের মাধ্যমে আমরা দায়িত্ব পেয়েছি এবং এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দিয়ে সেখানে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে আবার ভারমুক্ত করার ঘটনা একেবারে নতুন। সেজন্য নেত্রীর নির্দেশনার আলোকে আমরা কাজ করব। আমাদের জাতীয় নেতারা, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তুলে দিতে পারব।
ছাত্রলীগে পদ বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ছাত্রলীগে কাউকে পদ বাণিজ্যের সুযোগ দেয়া হবে না। ছাত্রলীগ একটি আদর্শিক ছাত্র সংগঠন। কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক যারা সাহেদদের (রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক) মতো, যারা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য রাজনীতি করেন তাদের আমাদের দরকার নেই। দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা বলেছি যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে চলতে পারবেন তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। সেভাবে আমরা কাজ করছি। যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে চায়, নিজের স্বার্থে সংগঠনকে বিপদে ফেলতে চায়, বিতর্কিত করতে চায় তাদের কোনোভাবেই ছাত্রলীগে জায়গা দেওয়া হবে না। হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, তাদের সময় শেষ।
ছাত্রলীগের দুই কর্মীর আত্মহত্যার বিষয়ে জয় বলেন, এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। ছাত্রলীগ ৫০ লাখ নেতাকর্মীর সংগঠন। তাদের যে কোনো ধরনের সমস্যার খবর পেলে আমরা যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করি। সমাধান করার চেষ্টা করি। ওই দুই ভাইয়ের বিষয়ে আমরা কোনো খোঁজ পাইনি।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আর্থিক সমস্যা সমাধানে কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?- এমন প্রশ্নের উত্তরে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, শিক্ষার্থীদের সংগঠন ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে নেত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করি। আমাদের সবার আর্থিক অবস্থা এক রকম নয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ পরিবার। আমরা পরিবার থেকে টাকা এনেও বিভিন্ন প্রোগ্রাম করি। যেহেতু আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। যে কোনো সমস্যায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমাধান করা সম্ভব। সমস্যার কথা জানলে আমরা সমাধানের চেষ্টা করি।
কমিটি না হওয়া শাখাগুলোতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে জয় বলেন, ছাত্রলীগের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কমিটি আছে। সেখানে কিছু কিছু জায়গায় দীর্ঘ সময় ধরে কমিটি নেই। প্রথম থেকে আমরা সেই দিক বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছি। দ্রুততম সময়ে কমিটি গঠন করা হবে।
ছাত্রলীগ চলে কীভাবে, আর্থিক জোগান আসে কোথা থেকে- এমন প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, ছাত্রলীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন। এ সংগঠনের সাবেক নেতারা এখন এমপি-মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তারা বিভিন্ন কর্মসূচিতে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন। নিজের পরিবার থেকেও টাকা নেই। ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে আমাদের সংগঠন চলে।
নিজের লেখাপড়ার কথা উল্লেখ করে ছাত্রলীগ সভাপতি জয় বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে তিনি অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত।