ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশে পৌঁছেছে ভারতের উপহার ট্রায়াল শেষ না হওয়া ২০ লাখ ডোজ করোনা টিকা ‘কোভিশিল্ড’। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের মুম্বাই থেকে টিকাবাহী একটি বিমান ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার কিছু আগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ফ্লাইটটি। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিলো ভারত সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই টিকা গ্রহণ করবে। জাতীয় পরিকল্পনার সঙ্গে এই ২০ লাখ টিকা যুক্ত করা হবে। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
তবে ভারতের এই টিকা নিয়ে জনমনে ব্যপক আশংকা রয়েছে। কারন প্রথমে ভারত থেকে টিকা ক্রয়ের সব প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ভারত সরকার হঠাৎ করে বিদেশে টিকা রফতানীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের জনসমর্থনহীন হাসিনা সরকার বেশ বেকায়দায় পড়ে যায়। এই লজ্জাজনক অবস্থায় অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিশেষ অনুরোধে ২০লাখ অপরিক্ষিত টিকা বাংলাদেশে পাঠিয়ে হাসিনা সরকারের মুখ রক্ষার চেষ্টা করছেন মোদী সরকার বলে জনমনে বিশ্বাস রয়েছে।
ভারত বায়োটেকের বার্তাঃ
এদিকে যে সব নারী গর্ভবতী এবং যারা সন্তানদের স্তন্যপান করাচ্ছে তাদের এই কোভ্যাকসিনের ডোজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে ভারত বায়োটেক৷ মঙ্গলবার কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এমনটি বলা হয়।
ভারত বায়োটেকের আরো পক্ষ থেকে বলা হয়, যাদের জ্বর রয়েছে বা রক্তপাতজনিত সমস্যা রয়েছে তাঁদেরও এই ভ্যাকসিন নিতে পারবে না৷
এছাড়া ভারত বায়োটেকের ফ্যাক্টশিটে লেখা হয়েছে, যদি কারওর অতীতে কোনও অ্যালার্জিঘটিত সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে এই ভ্যাকসিন এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
সেখানে আরো বলা হয়েছে, এখনও ভ্যাকসিনের তৃতীয় দফার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল কার্যকারিতা প্রসঙ্গে স্পষ্ট কোনও তথ্য প্রমাণ এসে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছে ভারত বায়োটেক।
বিশেষ করে গত কয়েকদিনে গনমাধ্যমে ভারতের এই ট্রায়াল শেষ না হওয়া করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকটা ধোয়াশা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সহ তার মিডনাইট সরকারের মন্ত্রী- আমলাগন ভারতের এই টিকা প্রথমে নেবেননা ঘোষনা দেয়ায় সর্বস্তরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে টিকা দেওয়া শুরু হবে। বাংলাদেশ সরকারিভাবেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে, যার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে যদিও এই ব্যাপারে ভারত সরকারের কোন ভাষ্য পাওয় যায়নি।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে নতুন করোনা ভাইরাসের টিকা আসার পর প্রথম দিনে ২০ থেকে ২৫ জনের ওপর তা প্রয়োগ করা হবে। আগামী ২৭ থেকে ২৮ জানুয়ারি টিকা প্রয়োগ শুরু হতে পারে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মান্নান জানান, টিকা বিতরণের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই করে ফেলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব জানান, টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালকে নির্বাচন করা হয়েছে। সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। প্রথমদিন টিকা দেওয়ার পরদিন ড্রাই রান বা টেস্ট হিসেবে এই টিকা দেওয়া হবে। তারপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী, এক সপ্তাহ অপেক্ষা করব।