ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ পৌরসভা নির্বাচন কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই নয়টি জেলার প্রশাসককে (ডিসি) সম্প্রতি বদলি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই নির্বাচনে ‘আপিল কর্তৃপক্ষ’ হিসাবে দায়িত্ব পালন করা এ সব কর্মকর্তাকে বদলি করার আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সম্মতি নেওয়া হয়নি। আইন অনুযায়ী, নির্বাচন চলাকালে জেলা প্রশাসকসহ পাঁচ ধরনের কর্মকর্তাকে ইসির সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া কোনো ভাবেই বদলি করা যাবে না।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট আকারে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সাতজন জেলা প্রশাসকের বদিল আদেশ স্থগিত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাকি দুই জেলা প্রশাসকের বিষয়ে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া কাউকে বদলি করা যায় না। আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়ে বলেছি, জেলা প্রশাসকেরা ফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত নিজ নিজ জেলায় অবস্থান করবেন। তাদের বদলি করা যাবে না। প্রয়োজনে বদলি আদেশ স্থগিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে জনপ্রশাসক সচিব শেখ ইউসুফ হারুনের মোবাইল ফোন নম্বরে শনিবার বিকালে একাধিকবার কল করা করা হলেও তিনি ধরেননি।
জানা গেছে, চলমান পৌরসভা নির্বাচনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের আপিল কর্তৃপক্ষ হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত তিন ধাপে ১৪৭টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ ধাপে ৫৬ পৌরসভা ১৪ ফেব্রুয়ারি ও পঞ্চম ধাপে ৩১ পৌরসভায় ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে। এসব নির্বাচন চলাবস্থায় নয়টি জেলার ডিসি পদে রদবদল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সম্মতি নেওয়া হয়নি। জেলাগুলো হচ্ছে- কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, রাঙামাটি, ঝিনাইদহ, ভোলা, দিনাজপুর, জামালপুর ও হবিগঞ্জ।
ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, চতুর্থ ধাপে কুমিল্লার হোমনা ও দাউদকান্দি, ময়মনসিংহের ফুলপুর ও ত্রিশাল, রাঙামাটি সদর, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও জামালপুরের মেলান্দহ পৌরসভায় ভোট হবে। আর পঞ্চম ধাপে ময়মনসিংহের নান্দাইল, ঝিনাইদহের মহেশপুর ও কালীগঞ্জ এবং ভোলা সদর ও চরফ্যাশন পৌরসভায় নির্বাচন হবে। এছাড়া ২৮ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকূপা ও কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন রয়েছে। এমন অবস্থায় ২৮ জানুয়ারি নয়টি জেলায় জেলা প্রশাসক পদে রদবদল করা হয়। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি। এমনকি বদলির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়নি। এতে আইনের আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলেও জানান তারা। যদিও চতুর্থ ধাপের মনোনয়নপত্র নিয়ে আপিল নিষ্পত্তির পর ও পঞ্চম ধাপের আপিল নিষ্পত্তির আগে এসব বদলি করা হয়।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা-২০১০ এর ৮৯ ধারায় এ বিষয়টি বলা আছে। এতে উল্লেখ আছে- জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী যে কোনো কর্মকর্তা এবং তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তাদের তফসিল ঘোষণা থেকে গেজেট প্রকাশের ১৫ দিন অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া বদলি করা যাবে না।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসকদের বদলির পর কয়েকজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে চিঠি দেন। নির্বাচন চলাবস্থায় জেলা প্রশাসক বদলি করার কারণে নির্বাচনী কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলেও মত দেন কেউ কেউ। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে সাতটি জেলার জেলা প্রশাসকদের সময় বেঁধে দিয়ে বদলির আদেশ স্থগিত করতে জনপ্রশাসন সচিবকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে হবিগঞ্জ ও জামালপুরের জেলা প্রশাসকের বদলির বিষয়ে চিঠিতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
জানতে চাইলে ঝিনাইদহ সিনিয়র জেলার নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রুকুনুজ্জামান বলেন, পৌরসভা নির্বাচন চলছে। ভৌগোলিক ও অবস্থানগতভাবে এ জেলার সম্পর্কে বর্তমান জেলা প্রশাসকের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কেও তার ধারণা রয়েছে। এছাড়া আইনি বাধ্যবাধকতার কথা জানিয়ে ইসি সচিবালয়ে চিঠি দিয়েছি। ওই চিঠি আমলে নিয়েছে ইসি। প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দেন ভোলা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আল মামুন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, চলমান পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে সাতজন জেলা প্রশাসককে নিজ নিজ জেলায় রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। জনপ্রশাসন সচিবকে দেওয়া ইসির চিঠিতে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ও ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিককে ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ না করা পর্যন্ত বদলি স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। একইভাবে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের বদলি আদেশ ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত এবং দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনের বদলি আদেশ ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করতে বলেছে ইসি। ইসির একজন কর্মকর্তা জানান, হবিগঞ্জ ও জামালপুরের জেলা প্রশাসকের বদলির আদেশের বিষয়টি তাদের জানা নেই। এ কারণে বিষয়টিও নির্বাচন কমিশনারদের কাছে উপস্থাপন করা হয়নি।