ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশনে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শীর্ষক তথ্যচিত্র সম্প্রচারের পর এতদিনেও সংশ্লিষ্টরা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ ধরনের প্রতিবেদনের কারণে পুরো জাতির মধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই উষ্মা প্রকাশ করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। অপরদিকে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। বিটিআরসির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন খন্দকার রেজা ই রাকিব।
আদালতের আদেশের পর বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা ই রাকিব বলেন, ‘হাইকোর্ট উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দ্রুত আল জাজিরার প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ তথ্যচিত্রটি অপসারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তথ্যচিত্রটি অপসারণ করতে যা যা করা দরকার, সেটি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ‘রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনী নিয়ে আল জাজিরা যে প্রপাগান্ডা চালিয়েছে, তারপরও রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ কেন এত দিন চুপ করে বসে ছিল, তা নিয়ে আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের প্রতিবেদনের কারণে পুরো জাতির মধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।’
এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নির্দেশে নিয়োগপ্রাপ্ত ছয় জন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) তাদের মতামত হাইকোর্টের কাছে তুলে ধরেন। এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম তার মতামত তুলে ধরে জানান, আল জাজিরার প্রচারিত তথ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেদনটিতে তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোনও যোগসূত্র দেখাতে পারেনি তারা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে আল জাজিরায় প্রচারিত তথ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম হাইকোর্টকে বলেন, ‘ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করা হলো। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেদনটিতে তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোনও যোগসূত্র দেখাতে পারেনি। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হলে রাষ্ট্রকেই বিতর্কিত করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। তার পাশাপাশি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও ফিদা এম কামালও রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন। তবে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু রিট আবেদনটির গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে মতামত দেন।
অপরদিকে আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ক্ষেত্র বিশেষে রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন। আর আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক রিট আবেদনটির গ্রহণযোগ্যতার বিষয় আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়ে বলেন, ‘আদালত চাইলে রিটটি শুনানির জন্য গ্রহণ করতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে আল জাজিরায় একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে সরকার ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এই প্রতিবেদনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, আল জাজিরার প্রতিবেদনটির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে। দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার অসৎ উদ্দেশ্যে এ প্রতিবেদন করা হয়েছে। যারা আগেও দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করেছে, তারাই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। পরে ওই প্রতিবেদনটি অপসারণ এবং বাংলাদেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।