ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অচিরেই ফ্যাসিস্ত হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
বৃহস্পতিবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বরিশাল মহানগরীতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ আহ্বান জানানো হয়।
জিলা স্কুল মাঠে এ সমাবেশে দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরুর আগেই পুরো এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। সমাবেশকে ঘিরে এদিন সকাল থেকেই সারা শহরে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহরের মোড়ে মোড়ে ভ্যান, জলকামান নিয়ে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় শহরের মরকখোলা পুল, নতুন বাজার টেম্পো স্ট্যান্ডের মোড়, জেলখানার মোড়, আমতলার মোড়, হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা, কাকলী মোড় ও গির্জা মহল্লার মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড বসিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
এর আগে সকালে রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি দল গাড়িবহর নিয়ে রওনা হন। পথিমধ্যে মাওয়া ফেরিঘাটে গাড়িবহর আসলে ফেরি কর্তৃপক্ষ তাদের অফিস বন্ধ করে চলে যায়। পরে লঞ্চে করে নেতাকর্মীদের নিয়ে পদ্মা পার হন বহরের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও সর্বশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা কি এই দেশ দেখার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম? যে দেশে সাধারণ মানুষকে গুম, খুন, হত্যা, অন্যায়ের শিকার হতে হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ভারতের অভ্যন্তর থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তিনি দেশে প্রথম সারিতে থেকে বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। দেশের প্রতি তার ভালোবাসা থেকে সেদিন রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তার মতো একজন প্রকৃত সৈনিকের খেতাব বাতিল করতে চায় কিছু লোক। এই স্বাধীন দেশে আমরা এটা কখনো হতে দেবো না। তিনি বলেন, পাশের দেশ মিয়ানমারে সামরিক শাসন জারি হয়েছে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছেন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। বর্তমান সরকারের শাসন তো সেই স্বৈরশাসকের চেয়েও খারাপ। আমরা ক’জন রাজপথে নামতে পেরেছি?
বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা বলেন, এই স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের এখন কেউ স্মরণ করে না। যুদ্ধের সময়ে দেশে মুক্তিযোদ্ধা ছিল ৮০ হাজার আর এখন হয়ে গেছে আড়াই লাখ। এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের বদৌলতে। আজকের এই সমাবেশে আসার সময় জায়গায় জায়গায় পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করেছে, আটক করেছে, বাধা দিয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে সেই প্রতিবাদ কোথায়? সেই প্রতিবাদের স্ফূলিঙ্গতো আমি দেখতে পাচ্ছি না। এখনকার তরুণরা কি অবদান রাখছেন এই দেশের জন্য? তাই আসুন এখনই সময় এই স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মাঠে নামার। আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে হটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সমস্ত সিটি নির্বাচনগুলোকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার স্বপ্ন দেখছে সরকার। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, মাফিয়া সরকারের অধীনে নয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, বিচার বিভাগ আর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আলাদা কিনা সেটা জানতে চাই। আমরা নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চাই এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন চাই।
খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ৬ সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের নিয়ে তারেক রহমানের নির্দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ শুরু করেছি আমরা। মাফিয়া সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
বরিশাল বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী, আজ চোরচোট্টা দিয়ে দেশ চালানো হচ্ছে। সমাবেশস্থলে আসতে পথে পথে বাধা দেয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। ভোলার নেতাকর্মীদের আসতে দেয়া হয়নি। সমাবেশস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তারপরও নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা যায়নি। ঢাকা সিটি উত্তর করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, দিন দিন জালিম সরকার স্বাভাবিক নির্বাচন হতে দিচ্ছে না। কোনো নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারছে না। বর্তমান আওয়ামী সরকার বলে তারা দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করে না কিন্তু তারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন।
ইশরাক হোসেন বলেন, আজকে সমাবেশে আসার জন্য ঢাকা থেকে রওনা দেয়ার পর মাওয়া ঘাটে সরকার নির্লজ্জ ও ন্যক্কারজনকভাবে ফেরি বন্ধ করে দেয়। কর্তৃপক্ষ অফিস বন্ধ করেই চলে যায়। আমাদের প্রায় ২৫টি গাড়ি এখনো সেখানে রয়ে গেছে। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আছি। আমাদেরকে কোনো বাধাই আটকাতে পারবে না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যেভাবে মাঠে আছেন, গত ১৩ বছর ধরে অত্যাচার, নির্যাতন, মামলা-হামলার শিকার হয়ে যেভাবে মাঠে আছেন, আপনাদেরকে দেখে আমি আরো উজ্জীবিত হলাম। আপনারা আগামী আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিন।
ইনশাআল্লাহ বরিশাল থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন পাকাপোক্ত হবে।
বরিশাল মহানগরের সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সারোয়ারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি নেতা আবুল হোসেন খান, ওবায়দুল আকরাম, আলমগীর হোসেন প্রমুখ।