ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ খুলনায় আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিভাগীয় সমাবেশ সফল করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রশাসন সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি।
অন্যদিকে, খুলনা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা জেলার ১৮ টি রুটে সকল ধরণের পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। নগর জুড়ে টানটান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যলয়ের সামনে এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন ‘সমাবেশ ব্যর্থ করার চক্রান্ত বিএনপি মেনে নেবে না। যত বাধাই আসুক, বিএনপি সমাবেশ করবেই।’
সূত্র জানায়, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, শহীদ প্রেসিডন্টে জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাম বাতিলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশের ছয় সিটিতে দলীয় মেয়র প্রার্থীদের নেতৃত্বে খুলনাতে ২৭ ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় দলটি। নগরীর শিববাড়ি মোড়, হাদিস পার্ক, মহারাজ চত্বর ও ডাকবাংলো মোড়সহ বিকল্প চারটি স্থানের নাম দিয়ে একাধিকবার সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়। তবে প্রশাসন সমাবেশ অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি।
গত বৃহষ্পতিবার দলীয় কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে প্রেসব্রিফিং করে জানানো হয়, অনুমতি না পেলেও গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে বিএনপি যেকোনো মূল্যে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ করবে। প্রেস ব্রিফিংয়ে নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর এমন ঘোষণার পর ওই রাতেই খুলনা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতি শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেন।
মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা পরিবহন বন্ধের বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ‘বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও অরাজকতার আশঙ্কা রয়েছে, তাই পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে’। এর পরপরই নগর বিএনপির সভাপতি গণমাধ্যমকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সমাবেশ বানচাল করার জন্যই সরকার ও তার পুলিশ বাহিনীর মদদে পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যাতে সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা কর্মীরা খুলনা আসতে না পারেন।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, শনিবার বেলা আড়াইটায় খুলনা নগরীর শহীদ মহারাজ চত্ত্বরে বিএনপির সমাবেশ যেকোন মুল্যে হবেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, হঠাৎ করে নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতার করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পুলিশ। সমাবেশের ৯৫ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু সমাবেশ ব্যর্থ করতে ষড়যন্ত্র চলছে। সমাবেশের অনুমতি চেয়ে কয়েক দফায় আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু অবৈধ সরকার কোন জায়গার অনুমতি দেয়নি। পরিবহন বিভাগের মালিকদের ডেকে নিয়ে খুলনার ১৮ রোডের সকল গাড়ি চলাচল ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। মহারাজ চত্ত্বরেই সমাবেশ হবে। বিএনপি আশাবাদি অচিরেই অনুমতি দেওয়া হবে। শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৫০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই আটক করা হয়েছে। পুলিশের এই আচরণ মোটেই কাম্য নয়। এই নীতি পরিহার করে নেতাকর্মীদের নির্বিঘ্নে সমাবেশে আসতে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সাথে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি, পুলিশের আচরণ পরিহারের দাবি জানান তিনি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, বিএনপি নেতা মীর কায়সেদ আলী, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, এড. বজলুর রহমান,স ম অব্দুর রহমান, রেহানা ঈসা, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, শেখ আব্দুর রশিদ, আরিফুজ্জামান অপু, মোল্লা খায়রুল ইসলাম, সিরাজুল হক নান্নু,আশরাফুল হক নান্নু, মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ, আসাদুজ্জামান মুরাদ, মহিবুজ্জামান কচি, মেহেদি হাসান দিপু, ইকবাল হোসেন খোকন, ওয়াহেদুর রহমান রানা, এস এম শাহজানহান, ইউসুফ হারুন মজনু, নিয়াজ আহমেদ তুহিন, মিজানুর রহমান মিলটন, শামসুজ্জামান চঞ্চল, আবু সাঈদ শেখ, মোল্লা কবির হোসেন, জাফরী নেওয়াজ চন্দন, শরিফুল ইসলাম বাবু, সাইমুন ইসলাম রাজ্জাক, রবিউল ইসলাম বরি প্রমূখ।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আজকের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম। বিশেষ অতিথি থাকবেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চোধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এছাড়া প্রধান বক্তা ছয় সিটির মেয়র প্রার্থীরা।