DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

স্বাধীনতার মিথ্যা ঘোষকের কোনো ঠিকানা থাকবে নাঃ শেখ হাসিনা।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটি এখন প্রমাণিত হয়েছে যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রদর্শিত উন্নয়নের পথেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে পথ তিনি দেখিয়ে গেছেন, সেই পথ ধরেই আমরা এগোচ্ছি। তিনি যা যা করতে চেয়েছিলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, সেই কাজগুলোই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে। আর তার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল রবিবার জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় কার্যালয় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্ম না হতো তাহলে আমরা বাঙালিরা জাতি হিসেবে কখনো বিশ্বে মর্যাদা পেতাম না। সম্মান পেতাম না, একটা রাষ্ট্রও পেতাম না। তিনি যে সংগ্রাম চালিয়েছেন তাতে অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে ধীরে ধীরে এ দেশে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানগুলো করার সুযোগ পাচ্ছি জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই। অথচ ’৭৫-এর পরে ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নামটি পর্যন্ত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নাম আর আজকে কেউ মুছতে পারবে না।

তিনি এ সময় কারো নাম উল্লেখ না করে সাবেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বানাবার বিএনপি-জামায়াতি ষড়যন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে মিথ্যা ঘোষক বানানোর চেষ্টা হয়েছিল আজ আন্তর্জাতিকভাবেও আপনারা দেখেন সেই ঘোষকের আর কোনো ঠিকানা থাকবে না। কারণ আজকে বিশ্বনেতারা নিজেরাই প্রচার করছেন এবং অনেক জায়গায় রেজল্যুশনও হচ্ছে যে ২৬শে মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা দেন। আরো বক্তৃতা করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম এমপি ও আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ জাতির পিতাই প্রথম এ দেশে ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। সেদিনই প্রথম ভাষার দাবিতে ধর্মঘট পালন করা হয়। এই মার্চ মাসটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এ মাসেই তিনি ৭ই মার্চের ভাষণ প্রদান করেন, যেটি বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন আর ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছি এবং এ সময় এটুকুই বলব, জাতির পিতা এই দেশটিকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন এবং তাঁর লক্ষ্য ছিল এ দেশের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের ভাগ্য তিনি পরিবর্তন করবেন। কেননা এ মাটির সন্তান এর আগে কখনই এ দেশের শাসন ক্ষমতায় আসতে পারেনি।’

১৫ই আগস্ট ট্র্যাজেডির উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ইতিহাস পাল্টে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা হলো, তাঁর (বঙ্গবন্ধু) নামটাও নেওয়া যাবে না। মুক্তিযোদ্ধারা ‘মুক্তিযুদ্ধ করেছি’, বলার সাহসও পায়নি। তারা সেই সাহস হারিয়ে ফেলেছিল। কারণ তখন এটা বললেই নির্যাতন করা হতো। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলদারদের চাটুকারিতা করেছে, তারাই সব কিছু বলতে পারত।” তিনি বলেন, ‘সত্যকে সত্য বলা নিষিদ্ধ ছিল। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, যে ভাষণের মধ্য দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনকে সশস্ত্র বিপ্লবে রূপ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, সেই ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল।’

এ সময় দল ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ ও আমার দলের নেতাকর্মীদের কাছেও কৃতজ্ঞ। কারণ তারা ভোট দিয়েছে বলেই আমরা আজ ক্ষমতায়। যার কারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি, নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছি। এ উপলক্ষে বহু দেশি-বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান এসেছেন, আসছেন। অনেকেই বার্তা পাঠাচ্ছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত একটা কালো অধ্যায় ছিল, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল আরেকটি কালো অধ্যায়। আমরা সেখান থেকে উত্তরণ করেছি। জাতির পিতার দেখানো পথে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ১৯৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ করছি।’

তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বলব, আমরা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। ১০ দিনের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি শেষ হবে। পরে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি সহযোগী সংগঠনকে নিজস্ব কর্মসূচি নিতে হবে। সেটি ঢাকা বা মহানগর পর্যায়ে শুধু নয়, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত করতে হবে। শুধু আলোচনা, সভা-সেমিনারে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না, দরিদ্রদের সহযোগিতা করতে হবে। করোনায় অর্থনৈতিকভাবে মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আমরা সেটা নিশ্চিত করছি, এ বিষয়গুলো দলের পক্ষ থেকেও দেখতে হবে।’

এ সময় ‘শস্যক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু’ তৈরি করে গিনেস বুকে নাম করায় কৃষি ইনস্টিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ওই কৃষককে ধন্যবাদ জানাই, যিনি এ কাজটি করেছেন। তিনিই আমাদের পথ দেখিয়েছেন। কৃষক ও মেহেনতি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। আর সেটা আন্তরিকতা দিয়ে করতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা সেটা পারব।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!