DMCA.com Protection Status
title="৭

চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্টে শ্রমিক বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ৫ জন নিহত

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  এবার চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় অবৈধ হাসিনা সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ট এস আলম গ্রুপের মালিকানায় নির্মাধীন ‘এস এস পাওয়ার প্লান্টের’ শ্রমিকরা বিভিন্ন বিষয়ে দাবি দাওয়া বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারীর সময় এবং জুম্মার নামাজের সময় দাবী করার বিক্ষোভে পুলিশ বিনা কারনে গুলি চালালে ৫জন নিহত এবং ২৫/৩০ জন আহত হয়। 

এই বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের জেরে গুলিতে মোট ৫ জন হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী৷ আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন কমপক্ষে ২৫ জন৷ তিনি শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে গনমাধ্যমকে বলেন, ‘‘শ্রমিকরা সকালে তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে গিয়ে সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করে৷’’

কিন্তু শ্রমিকরা দাবি করেছেন, পুলিশ আগেই গুলি করেছে৷ একজন শ্রমিক বলেন, ‘‘আমাদের রমজানে ইফতারের সময় দেয়া হয় না৷ আমরা বলেছি আমাদেরকে নামাজ, ইফতার ও রোজার ছুটি দিতে হবে৷ এসব দাবি না মেনে পুলিশকে দিয়ে আমাদের আন্দোলনে গুলি চালানো হয়েছে৷’’ আরেক জন শ্রমিক অভিযোগ করেন, ‘‘আন্দোলন শুরুর পরই পুলিশ গোলাগুলি শুরু করে৷ অনেকের মাথায় পিঠে গুলি লাগে৷ যে যেভাবে পেরেছি ছুটে পালিয়েছি৷’’ নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের মধ্যেই পুলিশের একটি ক্যাম্প আছে৷ শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, মালিকপক্ষ তাদের ন্যায্য আন্দোলন দমনে পুলিশকে ব্যবহার করেছেন৷

আন্দোলন শুরুর পরই পুলিশ গোলাগুলি শুরু করে’

শনিবারের ঘটনায় চারজনকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ মৃত ঘোষণা করা হয়৷ আরেকজন মারা যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, তিনজন পুলিশসহ ১৯ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়৷ তাদের মধ্যে একজন শ্রমিক মারা যান৷ তিনি বলেন, ‘‘আহত শ্রমিকরা জানিয়েছেন দাবি দাওয়া নিয়ে মালিক পক্ষের সাথে তাদের আগে থেকেই ঝামেলা চলছিলো৷’’

ঘটনার পর বাঁশখালী এবং হাসপাতালে আহত শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের বেশ কয়েক মাস ধরে নিয়মিত বেতন দেয়া হচ্ছিল না৷ সেই সঙ্গে তারা বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন৷ রোজার মাসে কাজের সময় পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন তারা, তাও মানা হচ্ছিল না৷ এছাড়াও শ্রমিকদের অভিযোগ সেখানে পানি ও টয়লেটের সংকট রয়েছে৷ আট ঘণ্টার পরিবর্তে ১০ ঘণ্টা কাজে বাধ্য করা হয়৷ তাদের সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করা হয়৷ এনিয়ে তারা ১১ দফা লিখিত দাবি দিয়েছিল৷ শুক্রবারও তাদের কাজ করতে হয়৷ এনিয়ে শুক্রবার তারা বিক্ষোভ করেন৷ শনিবার সকালে তারা আবার বিক্ষোভ করলে তা দমনে গুলি চালানো হয়৷

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘‘শ্রমিকদের মধ্যে বেতন  ও কর্মঘণ্টা নিয়ে অসন্তোষ ছিলো৷ তবে শনিবারের বিক্ষোভে শ্রমিক ছাড়াও স্থানীয় লোকজন অংশ নেয়৷ তারা গাড়ি পোড়ায়, ভাঙচুর করে৷ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে৷’’

বাঁশখালী থানার ডিউটি অফিসার এসআই আল মামুন জানান, ‘‘প্ল্যান্টের মধ্যেই পুলিশ ক্যাম্প আছে৷ সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে গুলির ঘটনা ঘটে৷ তারপর আরো পুলিশ পাঠানো হয় চট্টগ্রাম থেকে৷ অতিরিক্ত পুলিশ যাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে৷’’

নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে৷ তবে বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি৷

আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছেঃ

চীনের সাথে যৌথ উদ্যোগে দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ এস আলম-এর কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় প্রায় আট বছর আগে৷ ২০১৬ সালের এপ্রিলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের রিরোধিতা করে স্থানীয়রা আন্দোলন করেন৷ তখন গুলিতে চারজন নিহত হন৷ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে স্থানীয়রা শুরু থেকেই পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে এর বিরোধিতা করে আসছেন৷

এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা৷ ২০২২ সাল নাগাদ কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা৷ এই প্রকল্পে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানে ৩০ ভাগ বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা গেছে৷ বাঁশখালীর প্রত্যন্ত এলাকায় সমূদ্রের তীরে এর অবস্থান৷ ফলে সাংবাদিকরা বা প্রশাসন ওখানকার খোঁজ খবর তেমন পান না৷ পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও কেন্দ্রটিতে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে৷ প্রায় তিন হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করেন৷ ব্যবস্থাপনায় চীনা নাগরিকরাও আছেন৷

এনিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম লাভলুকে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ এসএমএস পাঠানো হলে তার জবাবও দেননি৷

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!