ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সম্প্রতি দেশ কাঁপানো মুনিয়ার মৃত্যু রহস্য নাকি নতুন মোড় নিয়েছে। এখন তদন্তকারী কর্মকর্তারা তদন্ত করতে গিয়ে মামলার সম্পূর্ণ নতুন দিক খুঁজে পাচ্ছে। তারা লক্ষ্য করছে যে, এই আত্মহত্যা করার আগে মুনিয়া নুসরাতের সাথে অন্তত ১৭ বার কথা বলেছে। নুসরাত তানিয়া নিজেও এই বারবার কথা বলার কথা স্বীকার করেছেন এবং আত্মহত্যা করার আগে মুনিয়ার সাথে শেষ কথা হয়েছে নুসরাতের সাথেই।
আর এ কারণেই তদন্তকারীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, নুসরাত কি কথা বললেন যে মুনিয়াকে আত্মহত্যা করতে হলো। আর এটি এই তদন্তের ক্ষেত্রে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এখন তদন্তকারী কর্মকর্তারা নুসরাত এবং মুনিয়ার শেষ কথোপকথনগুলো যাচাই করবে। শুধু কথোপকথন নয়, তাদের মধ্যে মেসেঞ্জার এবং এসএমএস এ যে তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখবে। তারপর তারা এই আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, জনমনে প্রথম থেকে ধারনা রয়েছে যে যতোযাই হোকনা কেন মুনিয়া হত্যা কিংবা আত্মহত্যায় দেশের শীর্ষ ধনী গ্রুপ বসুন্ধরার এমডি আনভীর সোবহানের সংশ্লিষ্টতা প্রমান করা সম্ভব হবেনা।
উল্লেখ্য যে, গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের ১২০ নাম্বার ফ্ল্যাটে মারা যান মুনিয়া। তার মৃত্যু আত্মহত্যা না হত্যাকাণ্ড এটি যখন মীমাংসিত নয় তখন তড়িঘড়ি করে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত তানিয়া একটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন। এই আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলাটি গুলশান থানা গ্রহণ করে তদন্ত করছে। আবার এর পরপরই মুনিয়ার বড় ভাই সবুজ ঢাকার সিএমএম আদালতে মুনিয়াকে শারুনরা হত্যা করেছে বলে একটি মামলা দায়ের করেন। সিএমএম আদালত ওই মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে এই যুক্তিতে যে, যেহেতু একটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হয়েছে সেটি তদন্ত নিষ্পত্তি হওয়ার পর এই মামলাটির তদন্ত করা হবে। এখন আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার এজাহারে নুসরাত যে সমস্ত যুক্তি দেখিয়েছেন সে সমস্ত যুক্তিগুলো কোনোভাবেই প্রমাণ করে না যে, নুসরাতকে আত্মহত্যা করার জন্য আসামি প্রলুব্ধ করেছিল, প্ররোচিত করেছিল বা উত্যক্ত করেছিল। যেটি প্ররোচনার মামলার জন্য অপরিহার্য।
যেদিন মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন সেই দিন বা তার আগের তিন দিন মুনিয়ার সঙ্গে অভিযুক্তের কোনো কথোপকথনের আলামতও পায় নি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। বরং দেখা যাচ্ছে যে, ২৫ এপ্রিল থেকে আত্মহত্যার আগ পর্যন্ত মুনিয়ার সাথে অন্তত ১৭ বার টেলিফোনে কথা বলেছেন নুসরাত তানিয়া। কেন আচমকা টেলিফোনে এতক্ষণ কথা বললেন সেটি নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে মুনিয়া ফোনে তাকে কি বলেছিলেন এবং তারপর নুসরাত কেন বারবার তাকে ফোন করছিলেন এবং ফোনে কি কথা বলছিলেন তার তথ্য-উপাত্ত এখন তদন্তের জন্য জরুরী হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ এমনও মনে করছেন যে, হয়তো নুসরাত এমন একটি আতঙ্ক ছড়িয়েছেন বা এমন একটি উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি করেছেন, যার ফলে মুনিয়ার মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং এই চাপ থেকে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
মুনিয়ার টেলিফোন পেয়ে যখর নুসরাত ঢাকায় আসছিলেন, ঢাকায় আসার পথে তিনি কেন বারবার মুনিয়াকে ফোন করছিলেন? কেন তিনি বারবার ম্যাসেজ পাঠাচ্ছিলেন? সেই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ মুনিয়া যখন তাকে ফোন করেছিল, বাদীর বক্তব্য অনুযায়ী সেই ফোন ছিল স্বাভাবিক এবং মুনিয়া তখন তাকে ঢাকা আসতে বলেছিল এবং তার জন্য কলা আনতে বলেছিল। এর মধ্যে আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে যে, যে গাড়িতে নুসরাত কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসলো সেই গাড়িটি কার? একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে যে, গাড়িটি নুসরাতের কাছে যেতে বিলম্ব করল কেন? এইসব প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই এখন তদন্ত নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলছেন যে, একটি মানুষকে যদি ১৭ বার ফোন করা হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, তাহলে অবশ্যই তার মধ্যে একটি মানসিক চাপ তৈরি হতে বাধ্য। আর সেই মানসিক চাপ থেকেই মুনিয়া আত্মহত্যা করেছে কিনা সেটিও এখন খতিয়ে দেখা দরকার।