ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক নির্লিপ্ততা এবং নিষ্ক্রিয়তার কারনেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত প্রায় ১যুগ ধরে মগের মুল্লুক স্টাইলে বাংলাদেশ শাসন করতে পারছে বলে অনেকে মনে করেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ বা জামাতের মতো কর্মী নির্ভর(অনেকে বলেন ক্যাডার নির্ভর) দল নয়,এই দলটি প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত সমর্থক এবং ভোটার নির্ভর দল।
এই সমর্থক ভিত্তির প্রধান অংশ সাধারন মানুষ বিশেষ করে মহিলারা হওয়ায় মারদাঙ্গা ও মাঠ গরমকরা আন্দোলনে আওয়ামী লীগ কিংবা জামাতের সমকক্ষ হয়ে উঠেতে পারেনি কোনোদিন।বিএনপির সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে সুষ্টু নির্বাচন এবং সে নির্বাচনে মোটামুটি ভোটার বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করন।
বিএনপির অতীতের নির্বাচনী বিজয়গুলো বিশ্লেষন করলে তাই আমরা দেখতে পাই।
আমাদের আজ ভাবতে হবে বিএনপির বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরনের উপায় কি? বিগত ২০১৩ ও ২০১৪ সালে হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনে অতিমাত্রায় জামাত নির্ভরতা কি বিএনপির জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো?
কেনো সারা দেশের প্রবল আন্দোলনের তোড়ে বিপর্যস্ত হাসিনা সরকারের শেষ ভরসাস্থল রাজধানী ঢাকা পতনের দ্বারপ্রান্তে এসেও বিএনপি থমকে গিয়েছিলো?
কেন বেগম খালেদা জিয়ার ২৯ শ ডিসেম্বর'১৩ এর ঢাকা অবরোধের চুড়ান্ত কর্মসূচীতে নেতা কর্মিদের মোবিলাইজ করতে ব্যর্থ হয়েছিলো বিএনপি?
জেহাদ কিংবা নূর হোসেনের মতো কতজন বিএনপি নেতা কর্মী পুলিশ/বিজিবির গুলিতে শহীদ হয়েছিলো সেদিন?এই কর্মসূচীর গোপন দলীয় পরিকল্পনা সরকারের কারা পাচার করেছিলো ,কাদের ষঢ়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে যায় জাতির অতি আকাংখিত একটি অবাধ নির্বাচনের সম্ভাবনা।
তদুপরী বিএনপির নির্বাচন বর্জন পুরোপুরী সফল হয়নি বলা যায়না। সেই আন্দোলনে গনমানুষের নিরব সমর্থনের কারনেই আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে ১৫৩ আসনে ৫ই জানুয়ারীর পূর্বেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তাদের লোকদের বিজয়ী ঘোষনা করে যাতে কোনক্রমে যদি নির্বাচন করা না যায় তবে আনুপাতিক হারে বাকিদেরও বিজয়ী ঘোষনা করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সরকার গঠন করা যায়।
যাক সে প্রসঙ্গ। আমার আলোচনা বিএনপিকে নিয়ে। আওয়ামী লীগকে জমাখরচ দিয়ে রাজনীতি করার অভ্যাস বিএনপিকে অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। আমি জানতে চাই বিএনপি প্রথম সারির নেতা যারা অতীতে মন্ত্রীত্ব সহ বিপুল সুযোগ সুবিধা অর্জন করেছেন তারা আজ গা বাঁচিয়ে চলছেন কেন?বিএনপি আজ অভিযোগ করছে তাদের নেতা কর্মীদের নির্বিচারে গুম খুন করছে সরকার।
এঘটনা অনেকাংশে সত্য হলেও এটাও সত্য যে এক ইলিয়াস আলী সহ বহু নেতা গুম হওয়ার পরও বিএনপির পক্ষ থেকে দেশে বিদেশে কোনো কার্যকর প্রচার প্রচারনা সৃষ্ঠি করা সম্ভব হয়নি।
বিএনপির কতজন কেন্দ্রীয় নেতা হাসিনা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে প্রায় পঙ্গুত্ব বরন করেছেন ,দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতো?
কতজন সাবেক মন্ত্রী বসৎ বাড়ী থেকে বিতাড়িত হয়েছেন এবং সন্তান পরিজন বিহীন নিঃসঙ্গ অসহায় জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন,বেগম খালেদা জিয়ার মতো??
কতজন বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতার ব্যবসা বানিজ্য কিংবা ব্যাংক হিসাব জব্দ করে চরম মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে,জিয়া পরিবারের মতো??
এসব তথাকথিত শীর্ষ নেতাদের গাঁ বাচানো এ সরকারের সাথে লিয়াজো বজায় রাখার প্রবনতাই আজ বিএনপির ব্যর্থতার মূল কারন বলে আমি মনে করি। তারা বিপুল বিত্ত বৈভবের অধিকারী হওয়া সত্বেও দলের জন্য আন্তরিক ভাবে কিছু না করা এবং চরম স্বার্থপরতা আজ বিএনপি সমর্থকরা জেনে গেছেন এবং আগামীতে আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তাদেরইতো জয়জয়াকার,এই মনোভাব সম্পর্কে বিএনপি তৃনমুল ওয়াকিবহাল আছি।
সম্পূর্ন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগনের ঘাড়ের উপর জাকিয়ে বসা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যদি সম্ভব হয়ও, প্রশাসন ,পুলিশ ,র্যাব এবং স্বশস্ত্র বাহিনীর সর্বত্র বপন করা আওয়ামী বীজের কুপ্রভাব বিএনপি কিভাবে মোচন করবে?
অন্যায়,অবিচার ,দূর্নীতিতে নিমজ্জিত এসব বাহিনীর কমান্ড স্টাকচার আজ ভেঙ্গে পড়েছে প্রায়।
বিএনপিকে দেশের স্বার্থে এসকল প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত পূনর্গঠন করতে হবে,মোকাবেলা করতে হবে হাজার হাজার কোটি টাকা এবং আওয়ামী পেশী শক্তিকে। এর জন্য প্রয়োজন একদল সৎ,নির্ভীক এবং দেশপ্রেমীক তরুন নেতা কর্মী,যারা জাতীয়তাবাদ ধারাকে সমুন্নত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে। তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যতে সোপান গড়তে হবে,বিএনপির কোটি কোটি সমর্থকদের এই আজ প্রত্যাশা।