ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে 'হাউস অ্যারেস্ট' বলে অভিহিত করার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করেছে অবৈধ হাসিনা সরকার। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার বাসায় অবস্থানকে 'হাউস অ্যারেস্ট' হিসেবে অভিহিত করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেলকে তলব করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে (এএইচসি) বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গে 'হাউস অ্যারেস্ট' শব্দটি ব্যবহার করা চরম বিভ্রান্তিকর।
এদিকে, সরকারের দাবী অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে গত বছর মার্চ মাসে মুক্তি দিয়েছিল সরকার। শর্ত ছিল তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না। এর পর থেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়া বাকি সময়টা গুলশানে তাঁর ভাড়া বাসা 'ফিরোজা'তেই অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার ওই বাসায় অবস্থানকে ‘হাউস অ্যারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গত বছরের মার্চ মাসে সরকার খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া ও বিদেশে না যাওয়ার শর্তে তাঁকে মুক্তি দেয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর কারাদণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০২০ সালজুড়েই তিনি ‘হাউস অ্যারেস্ট’ ছিলেন।”
যুক্তরাজ্যের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে সার্বিকভাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগগুলো নিয়ে সমালোচনা ঠেকাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করাসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আরো বিধি-নিষেধ এবং নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর অব্যাহত সহিংসতার ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সীমিত। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর ব্যাপক অভিযোগ ছিল। ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করায় সরকার যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনসহ অন্যান্য কূটনৈতিক মিশনের সমালোচনা করে। গত নভেম্বর মাসে উপনির্বাচনে ভোটারদের হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার আরো ঘটনা ঘটে।
এ দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্য তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ক্রসফায়ার, নির্যাতনসহ ২২৫টি বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দায়ী। গত বছরের আগস্ট মাসে পুলিশের হাতে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর বিচারবহির্ভূত হত্যা জনগণের কাছে নজিরবিহীন গুরুত্ব পায়। এরপর বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা কমেছে। অন্তত ৩১টি গুমের তথ্যও আছে ওই প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাপের মধ্যে আছে বলে যুক্তরাজ্যের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫১তম স্থানে নেমে এসেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার হয়রানির কথাও প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে। সেখানে আরো বলা হয়েছে, চলতি বছর যুক্তরাজ্য কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা ও উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র ইস্যুতে কাজ করা অব্যাহত রাখবে।