ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অতিতে যাঁরা নানা কারণে বাংলাদেশ পুলিশের সমালোচনা করতেন, তাঁরাও আজ পুলিশের পক্ষে কথা বলছেন, কলম ধরেছেন। এ প্রাপ্তি আমাদের বিশাল অর্জন। পুলিশের প্রতি মানুষের এ বিশ্বাস, আস্থা ও সম্মান আমাদের ধরে রাখতে হবে। মানুষের প্রথম ভরসাস্থল হিসেবে পুলিশকে কাজ করতে হবে।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে পুলিশ কর্মকর্তাদের এভাবেই নির্দেশনা দেন।
সম্প্রতি ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থ ও মোহের ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে জনমানুষের কল্যাণ ও দেশের ধারাবাহিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মানসিকতা নিয়ে পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ না করে প্রতিকূল ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
গত বছরের ১৫ এপ্রিল পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. বেনজীর। এরপর থেকে বিভিন্ন সভা, আলোচনা ও নির্দেশনামূলক বক্তব্যে তিনি পুলিশ বাহিনীকে ‘জনগণের প্রতি উন্নত আচরণের মানবিক পুলিশ বাহিনী’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পুলিশ বাহিনীকে জনমুখী করতে বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেন তিনি। স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক পুলিশিব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে পাঁচটি মূলনীতি ঘোষণা করেন আইজিপি। এগুলো হলো দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, জনগণের প্রতি অমানবিক ও অপেশাদার আচরণ বন্ধ করা, বিট পুলিশিং চালুর মাধ্যমে দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা নিশ্চিত করা, শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা ও পুলিশের সার্বিক কল্যাণ। এ নীতিগুলো প্রতিপালনে তিনি সব পুলিশ কর্মকর্তা ও ফোর্সকে নির্দেশনা দেন। মানবিক পুলিশ হিসেবে প্রতিটি সদস্যকে সাফল্য দেখাতে উৎসাহ জোগান। জনগণের কল্যাণে গঠিত ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব, ডিএনএ পরীক্ষা, সাইবার ক্রাইম, ফিন্যানশিয়াল ক্রাইম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক হেল্পডেস্ক, বিট পুলিশিং, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কার্যক্রমকে আইজিপি আরো কার্যকর করার উদ্যোগ নেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশনায় করোনাকালে মানবিক সেবা দিয়ে সুনাম কুড়িয়েছে পুলিশ। আচরণ পাল্টে পুলিশের সেবা দেওয়ার মানসিকতা অব্যাহত আছে।
চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সারদায় পুলিশ একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জনগণের সঙ্গে মানবিক আচরণের মাধ্যমে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে মানবিক পুলিশে পরিণত হতে হবে। নিজের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আপনাদের এমনভাবে উন্নত দেশের পুলিশের নেতৃত্ব দিতে হবে, যাতে চাকরি শেষে একটি উন্নত দেশের আধুনিক পুলিশ সদস্য হিসেবে আত্মতৃপ্তি নিয়ে গর্বের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।’
আইজিপি এরই মধ্যে পুরো দেশকে ছয় হাজার ৯১২টি বিটে ভাগ করে প্রতিটি বিটে একজন কর্মকর্তা পদায়নের মাধ্যমে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু করেছেন। প্রতিটি এলাকার মানুষ বিপদে বা প্রয়োজনে বিট অফিসারের কাছে যান। পুলিশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আইজিপি এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন। নারীরা যাতে সাইবার বুলিংয়ের শিকার না হয়, নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিত করতে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ ফেসবুক পেজ চালু করেন আইজিপি। করোনাভাইরাস থেকে সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে পুলিশপ্রধান চালু করেন ‘প্যানডেমিক পুলিশিং’। প্রণয়ন করেন আন্তর্জাতিক মানের এসওপি এবং ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্রটোকল। করোনায় সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে একক বাহিনী হিসেবে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। মারাও যান অনেকে। এ অবস্থায় ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ২৫০ শয্যার স্থানে বর্তমানে ৭৫০ শয্যার কভিড হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। আইজিপির এসব উদ্যোগে, সুরক্ষায় মনোবল বেড়েছে পুলিশ সদস্যদের।