ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে দুই বছর পূর্বে এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধের পরও আদালতের পরোয়ানায় ছয় মাসের শিশু সন্তানকে রেখে গ্রেফতার হলেন মা। তবে পরদিন জামিনে মুক্ত হয়েছেন তিনি।
এদিকে বাড়িতে মায়ের শূন্যতায় ছয় মাসের শিশু কন্যা ফাতেমার কান্নায় আশপাশ ভারী হয়ে উঠে। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী।
এনজিও কর্মকর্তাদের চরম গাফিলতির কারণে ঋণ পরিশোধের পরও আদালত থেকে পরোয়ানা জারি হয় গৃহিনী শাহনাজ পারভীন নামে।এই গৃহিণী সম্পূর্ন ঋণ পরিশোধের বিষয়টি কাকুতি মিনতি করে পুলিশকে জানানোর পরও পুলিশ তাকে নিয়ে যায়।
জানা যায়, গৃহিণীর শাহনাজ পারভীনের স্বামী নুরুল আমীন থান কাপড়ের ব্যবসায়ী। স্বামীকে ব্যবসার কাজে সহায়তার জন্য স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছিলেন ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে। যা মেয়াদান্তে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিস্তির সমস্ত টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন স্বামীর ব্যবসায়। প্রতিমাসে ৯৫০০ টাকা করে কিস্তিও পরিশোধ করতেন নিয়মিত।
একসময় সাংসারিক নানা জটিলতায় প্রতিবন্ধকতায় ২টি কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরে এনজিও কর্মীর অনুরোধে দুমাস পরই তা পরিশোধ করে ঋণমুক্ত হন শাহনাজ পারভীন।
২০১৭ সালে এমনভাবে একটি ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ করার পরও এনজিওর মামলার ফাঁদে আটকে পরে শাহনাজ পারভীন। সোমবার সন্ধ্যায় তার ছয় মাসের বুকের দুগ্ধপোষ্য শিশু রেখে আদালতের পরোয়ানা মূলে শাহনাজ পারভীনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন শ্রীপুর থানা পুলিশ। এরপর থেকেই মায়ের শূন্যতায় বাড়িতে কাঁদছিল এই অবুঝ শিশুটি।
শিশুটির বাবা নুরুল আমীন বলেন, আমরা ঋণ গ্রহণ করার পরে ২টি কিস্তি পরিশোধ করতে কিছুটা সময় লাগে। ২ মাস পরই ঋণের টাকা পরিশোধ করি। এসময় এনজিও আমাদের ঋণ পরিশোধের প্রত্যয়নও দেয়। তারা আমার স্ত্রীর নামে মামলা করেন। তবে এ মামলার বিষয়ে আমরা কেউ কিছু জানতাম না। হঠাৎ করে শ্রীপুর থানা পুলিশ গিয়ে আমার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, সমস্যা হয়েছিল আমার ছয় মাসের শিশু ফাতেমার জন্য। সে এখনও তার মায়ের দুধ ছাড়া কিছুই খায় না। বিকাল থেকেই তার মায়ের জন্য সে কান্নাকাটি করছে। করোনার এই মহামারির সময় এমন অমানবিকতায় পড়বো তা ভাবতেই পারছি না।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম সারোয়ার বলেন, এনজিওর মামলায় আদালতের পরোয়ানা মূলে এই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকেই তার ছাড়া পাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে ওই এনজিওর শ্রীপুর-১ শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম বলেন, শাহনাজ পারভীন নামের বর্তমানে আমাদের শাখায় কোনো ঋণ নেই, তবে পূর্বে ছিল। তখন আমি এ শাখার ব্যবস্থাপক ছিলাম না। তার কাছে আমাদের কোনো দেনা-পাওনা ছিল না। সমস্ত টাকাই পরিশোধ করা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে কেন মামলা হলো তা তিনি বলতে পারেননি তিনি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. এমদাদুল হক মাসুম জানান, মঙ্গলবার বিকালে শাহনাজ পারভীনকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক শেখ নাজমুন্নাহারের (২) আদালত হাজির করে জামিনের আবেদন করা হয়। পরে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।
এনজিওটির গাজীপুর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আতাউর রহমান বলেন, এই ঘটনায় যার বিরুদ্ধে গাফিলতি প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধেই প্রাতিষ্ঠানিক আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।