ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার শুনানির সময় কাঠগড়ায় প্রধান আসামী পুলিশের বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার মোবাইল ফোনে কথা বলার ঘটনায় সেখানে দায়িত্বরত চার পুলিশ সদস্যকে শাস্তিমূলক ভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম চৌধুরী তাদের প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আদালত চলাকালে কাঠগড়ায় প্রদীপের মোবাইলে কথা বলার বিষয়টি সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থী। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এসআই সাহাবুদ্দিনসহ চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে বাকিদের নাম জানা যায়নি।
এ ঘটনায় ওসি প্রদীপকে সতর্ক করেছেন আদালত।
তবে এ কারণে আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না বলে জানান পিপি ফরিদুল।
গত সোমবার কক্সবাজার জেলার দায়রা জজ আদালতে মামলার প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে শুনানির সময় কাঠগড়ায় মোবাইল ফোনে কথা বলেন বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ। এ কথা বলার একটা ছবি এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় চলছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আদালত কক্ষের কাটগড়ার ভেতরে হাঁটু গেড়ে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ। এ সময় কয়েকজন ব্যক্তি আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় দায়িত্বরত এক পুলিশ কনস্টেবল প্রদীপকে মোবাইল ফোনটি সরবরাহ করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মোবাইল ফোনে একের পর এক কলে আনুমানিক ৩০-৪০ মিনিট কথা বলেছেন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ। ওই দিন পরনে ছিল কালো পোলো শার্ট। তবে প্রদীপ কার সঙ্গে কী বিষয়ে কথা বলেছেন তা জানা যায়নি।
এদিকে সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন কারাগার থেকে আদালতে পৌঁছলে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দেখে বিরক্তি নিয়ে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘আমাকে নতুন করে চেনানোর দরকার নেই।’
তবে এধরনের দেশ কাঁপানো একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামীকে হ্যান্ডকাফ ছাড়া আদালতে নিয়ে আসাটাও উপস্থিত সাংবাদিক সহ সকলের কাছে দৃষ্টিকটু ঠেকেছে বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তাকে বেশ আত্মবিশ্বাসী ও চেহারা হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কয়েকজন আইনজীবী জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ মলিন মুখে আদালতে এলেও পরের দিন খুব আত্মবিশ্বাসী ও হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তাকে দেখা গেছে। মোবাইলে কথা বলার পরেই প্রদীপ আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন অনেকের।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় সোমবার। বুধবার পর্যন্ত টানা তিন দিন এ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে। মামলায় মোট ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ ১ থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন।
মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের সাক্ষ্য দিয়ে প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাহিদুল ইসলাম সিফাত।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টের গাড়ি তল্লাশি কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যা ব ১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।