ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের বন্ধনের বলে মন্তব্য করেছেন অবৈধ হাসিনা সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল চৌধুরী।
আর ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে যে অসাধারণ বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে, তা সব সময় থাকবে। দু‘দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহযোগিতা বাড়ছে। শিক্ষা সংস্কৃতিসহ সব পেশার উন্নয়নে দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভারত সহযোগিতা করছে, আগামীতেও করবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইডিইবি) আয়োজিত আইটেক ডে ২০২১ অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (আইটেক) প্রোগ্রাম-২০২১ উপলক্ষে আইটেক দিবস উদযাপনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রক্তের বন্ধন। উপমন্ত্রী বলেন,আমাদের স্বাধীনতায় দু’দেশের যোদ্ধারা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। আমাদের দু’দেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে। আমরা তাদের মতো অন্যদের শাসন করিনি বরং শাসিত হয়েছি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। তিনি বলেন, আইটেক আমাদের ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম। আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা এ প্রকল্পের পার্টনার, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার মতো দেশগুলো। আইটেক দেশগুলোর মধ্যে আবেগের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। প্রায় দুই লাখের বেশি পেশাজীবীর দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে এ প্রোগ্রাম। এটা শুধু ভারতে স্বল্প সময়ের জন্য অবস্থান করার বিষয় না বরং সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে পেশাজীবীদের এক জায়গায় একত্রিত করা যায়। যার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন নির্বাহীরা আরও দক্ষ হতে পারেন।
দোরাইস্বামী বলেন, শুধু বাংলাদেশের কথা বললে, এখানকার পেশাজীবীদের জন্য আমরা ভারতের সেরা সব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণের সুযোগ রেখেছি। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ সাপেক্ষে বিশেষায়িত কিছু প্রোগ্রামও আছে আমাদের। এখানকার সাংবাদিকদের জন্যও আমাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে সিভিল সার্ভিসের প্রায় এক হাজার ৮০০ জন কর্মকর্তাকে ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিচার বিভাগের প্রায় এক হাজার ৫০০ জন ছাড়াও পুলিশ সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে যে শুধু তারাই শিখছেন সেটি নয় বরং আমরাও শিখছি। আইটেক উভয় দেশের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে জ্ঞানবিনিময়ে এক ব্রিজের মতো কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আইটেক কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ পাওয়া বিভিন্ন অ্যালামনাই সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আইটেক কর্মসূচি নিয়ে মহিবুল হাসান বলেন, আইটেক একটি দারুণ কর্মসূচি। এটা বাংলাদেশের মধ্যকার স্বাভাবিক মেলবন্ধন, যা দুদেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় প্রতি মুহূর্তেই পরিলক্ষিত হয়। আমাদের দু’দেশের মধ্যকার এ সহজাত ভ্রাতৃত্ববোধ উদযাপন করার জন্য আইটেক একটি দারুণ মাধ্যম।
বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন নিয়ে ভারত শিক্ষা নিতে পারে উল্লেখ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ উন্নয়নের বিষয়ে ভারত আমাদের থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। যেমন গ্রামীণ উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থাগুলো কীভাবে সরকারের সহযোগী হয়ে কাজ করছে সেই অভিজ্ঞতা তারা আমাদের থেকে নিতে পারে। আমাদের দু’দেশের মধ্যে ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে মিল রয়েছে। আমরা দু’দেশ এসব বিষয়ে কাজ করতে পারি। এ ধরনের কর্মসূচি কাজের সেই সুযোগই বৃদ্ধি করে। আবার আমরা যে দক্ষতামূলক শিক্ষার কথা বলি, সেটা ভারতের কাছ থেকে আমরা শিখতে পারি।
হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ১৯৬৪ সালে ভারতীয় কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কৌশল কাঠামোর আওতায় ভারতের উন্নয়ন সহযোগিতা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আইটেক কর্মসূচি প্রচলিত হয় যার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ভারতের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ও উপযুক্ত প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রদান করা হয়। প্রতি বছর হিসাব, নিরীক্ষা, ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, গ্রামীণ উন্নয়ন, সংসদীয় বিষয়াবলীর মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য ১৬১টি সহযোগী দেশে ১০ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণ পর্বের আয়োজন করা হয়। আইটেক সহযোগিতায় বাংলাদেশ আমাদের প্রধানতম এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। গত বছর কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ই-আইটেকের অধীনে বেশ কয়েকটি ভার্চুয়াল কোর্সের আয়োজন করা হয়েছিল। এসব কোর্সের মধ্যে ছিল প্রথম সারির বিভিন্ন ভারতীয় ইনস্টিটিউটে নারীকেন্দ্রিক প্রোগ্রাম, কোভিড ব্যবস্থাপনা, সুশাসন অনুশীলন, ডেটা অ্যানালিটিক্স, দূর অনুধাবন, অ্যাডাল্ট হেপাটোলজি ইত্যাদি বিষয়ক কোর্স। ২০০৭ সাল থেকে আইটেক কর্মসূচির অধীনে চার হাজারের বেশি বাংলাদেশি তরুণ পেশাজীবী ভারতে এ ধরনের বিশেষায়িত স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কোর্স সম্পন্ন করেছে। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের মেধাবীদের সঙ্গে আমাদের সেরা বিষয়গুলো ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পাই। যার ফলে, আমরাও এদেশের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা থেকে সমানভাবে উপকৃত হই, বিশেষ করে যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করছে