ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়। তারা জানে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ৩০টি আসনও পাবে না। সেজন্য তারা প্রশাসন, বিচার বিভাগ, রাষ্ট্রযন্ত্র, এমনকি গণমাধ্যমকেও নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। এভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। ভয়ংকর আইন করে, ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের জনগণকে পায়ের নিচে দাবিয়ে রাখছে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির উদ্যোগে ‘১ অক্টোবর ২০০১ : নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সর্বশেষ নির্বাচন’ শীর্ষক এই সভা হয়। এতে দলীয় নেতাদের পাশাপাশি বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, এটিই নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে প্রথম কর্মসূচি; এরপর ধাপে ধাপে আরও কর্মসূচি আসবে।
এদিকে করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর বড় পরিসরে কোনো সভায় যোগ দেন নেতাকর্মীরা। এজন্য তাদের উজ্জীবিত দেখা গেছে। সকালের দিকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সভাস্থলে আসতে থাকেন। সভা শুরুর নির্ধারিত সময় সকাল ১০টার আগেই মিলনায়তন পরিপূর্ণ হলে বাইরেও অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। তাদের খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতেও দেখা যায়। সরকারকে হুঁশিয়ার করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন হতে হবে। যদি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে, আমরা সে নির্বাচন মেনে নেব না। নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর হবে না। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ এখন চেষ্টা করছে, আবার ক্ষমতায় আসতে। যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না সে ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। এজন্য তারা ইভিএম চালু করেছে। এই ইভিএম তাদের আরেকটা বড় হাতিয়ার। কী করে ভোট চুরি করা যায়, কী করে ভোট না পেয়েও নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করা যায় : সেই ইভিএম তারা করছে।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) রাশিয়া সফরের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকদিন আগে উনি নাকি রাশিয়াতে গিয়ে নির্বাচন পদ্ধতি দেখে এসেছেন। রাশিয়ারও একই অবস্থা। একইভাবে যে সরকারে থাকে, হয় সে একবার প্রেসিডেন্ট হয়, নয় তো প্রধানমন্ত্রী হয়। এটা আরও মজার জিনিস। একই লোক বারবার প্রেসিডেন্ট হচ্ছে, বারবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে, সিস্টেমটা তা-ই। বাংলাদেশের সঙ্গে তার কোনো পার্থক্য নেই। ওটা দেখে এসেছেন উনি। দিনের বেলায় কীভাবে ভোট চুরি করা যায়, সেটার ট্রেনিং নিয়ে এসেছেন তিনি।
নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষের অধিকার হরণ করার এই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। শুধু স্লোগান দিয়ে আন্দোলন হয় না। আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতিবাচক মন্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো আমাদের দাবি ছিল না। এটা ছিল আওয়ামী লীগের দাবি, এ দাবি ছিল শেখ হাসিনার। এর জন্য আপনারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন এবং গানপাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিলেন। এই আওয়ামী লীগই সেদিন তাদের গুন্ডাবাহিনী দিয়ে দেশকে অচল করে দিয়েছিল। বাংলাদেশের যারা শত্রু, যারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা চায় না, তারা তখন থেকেই একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল।
সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিতে হবে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের প্রেস ক্লাবে জায়গা দেবেন না, ফুটপাতে জায়গা দেবেন না। আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দেবেন না। এটা হবে না। সব মানুষের মুখে একটা আওয়াজ-আওয়ামী লীগ বোধহয় গেল, বিএনপি বোধহয় আসছে। ইনশাআল্লাহ আওয়ামী লীগ যাবে, বিএনপি আসবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন-অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, বিএনপির এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজউদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, হালিমা নেওয়াজ আরলী, রেহানা আখতার রানু, শাম্মী আখতার, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, আমিনুল হক, মীর নেওয়াজ আলী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, রফিকুল আলম মজনু, এসএম জাহাঙ্গীর, ইয়াসীন আলী, আরিফা সুলতানা রুমা প্রমুখ।