ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বহুল আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণ হলেও এখনো শেষ হয়নি এর বিচারকাজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ভারত বিরোধী স্ট্যাটাসকে কেন্দ্রে করে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে হল থেকে ডেকে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে কর্মী-সমর্থকরা।
দীর্ঘ সময়েও আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় গভীর আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন নিহত আবরারের বাবা ও মামলার বাদী বরকত উল্লাহ।
মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। সবশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওইদিন বিচারক অসুস্থ থাকায় আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। পরে ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মনির কামাল রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে শুরু হবে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন। এরপর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য হবে।
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ গন মাধ্যমকে বলেন, আমার ছেলে আবরার হত্যার দুই বছর হলো। দুই বছরেও ছেলের হত্যার বিচার না পাওয়ায় আক্ষেপ ছাড়া আর কিছু নেই আমার। বিচার কার্যক্রম যেন দ্রুত শেষ হয় এবং রায়ে আসামিরা যেন দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি পায়, এ প্রত্যাশা করছি।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ ভুইয়া বলেন, আবরার হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষের দিকে। আশা করি, দ্রুত বিচারকাজ শেষ হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম যেন দ্রুত শেষ হয়, এ প্রত্যাশা করছি আমরা। ন্যায়-অন্যায় রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে মামলার ১৯ জন সাক্ষীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া। এরও আগে ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে ২২ আসাসি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। এ মামলায় আরও তিন আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন করেন। একইসঙ্গে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।
ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।
অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন ও তদন্তে প্রাপ্ত আরও ছয়জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।
গ্রেফতার ২২ জন হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রাসেল, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।
মামলার তিনজন আসামি এখনো পলাতক। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। তাদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষের জন এজাহারবহির্ভূত আসামি।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।