ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হঠাৎ ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পেছনে সরকারের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পাশের দেশ ভারতে জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হলো। এ সরকার দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেই এমন অমানবিক একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। তিনি বলেন, জনগণের টাকা চুরি করতেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে বলে দেশে তেলের দাম বাড়ানোর যুক্তি দিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কমেছিল; তখনও তো দাম বেশি নিয়েছে। কিন্তু কেন? টাকা চুরি করতেই তখন দাম কমানো হয়নি। এখন আবার জনগণের পকেট কেটে টাকা নিজেদের পকেটে ভরতে দাম বাড়ানো হয়েছে।
দেশের বর্তমান অবস্থাকে ‘দুঃশাসন’ এর নমুনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক রাতে হঠাৎ করে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হলো। এলপিজির দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর প্রতি বছর বিদ্যুতের দাম তিনবার-চারবার করে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। বাজারে কোনো কিছু কেনার জো নেই। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহণ ধর্মঘটের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার পর ধর্মঘট হচ্ছে। ট্রাক ও বাস বন্ধ। এখন দেখবেন বাস মালিকরা বলবে, ভাড়া বাড়াও। ভাড়া না বাড়ালে আমরা গাড়ি চালাতে পারব না। ট্রাকওয়ালা বলবে আরও বেশি করে ভাড়া দিতে হবে, না হলে ট্রাক চালাতে পারব না। অর্থাৎ চাল-ডাল-চিনি-তেল-লবণ সবকিছুর দাম বাড়তে থাকবে। এ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করছে। বাংলাদেশের রাজনীতি ধ্বংস করেছে। এখন তারা মানুষের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করছে।
ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এ নির্বাচনে তো বিরোধী দল মাঠে নেই। তারা (আওয়ামী লীগ) নিজেরাই মারামারি করছে। ৮৭ জন নিহত হয়েছে। তারা নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে।
সাদেক হোসেন খোকাকে আপাদমস্তক একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ হিসাবে অভিহিত করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। খোকার মতো নেতা হিসাবে গড়ে ওঠার জন্য তার জীবন-দর্শন অনুসরণ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমান, যুবদলের সাইফুল আলম নিবর, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি : গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনস্বার্থকে তাচ্ছিল্য করে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে জনগণকেই শত্রুপক্ষ বলে মনে করে গণবিরোধী আওয়ামী লীগ সরকার। কেরোসিন, ডিজেল ও এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এ দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ ভয়াবহ দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে। জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ মূল্যবৃদ্ধির দুর্বিষহ প্রভাব অর্থনীতির সব খাতেই পড়বে। তিনি বলেন, এমনিতেই বর্তমানে চাল, ডাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেল ও রান্নার গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণ বৃদ্ধিতে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে এখন ত্রাহি অবস্থা। তারা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষি ও শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাগামহীনভাবে বাড়বে।