ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ভারতের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক তথা চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) বিপিন রাওয়াত নিহত হয়েছেন। হেলিকপ্টারের তার স্ত্রীসহ আরও ১১ আরোহীও নিহত হয়েছেন।
তামিলনাড়ুতে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভারতের বিমানবাহিনী সন্ধ্যায় তাদের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, পিটিআই ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিমানবাহিনীর ওই এমআই১৭ ভি৫ হেলিকপ্টারে ১৪ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে ৫ জন ক্রু এবং বাকি ৯ জন যাত্রী। যাত্রীদের মধ্যে বিপিন রাওয়াত, তার স্ত্রী মাধুলিকা রাওয়াত ছাড়া সেনা কমান্ডোরা ছিলেন। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে তামিলনাড়ুর নীলগিরি হিলস এলাকায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। দুপুর ২টার দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনী এ দুর্ঘটনার খবর জানায়।
বিপিন রাওয়াতকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি তামিলনাড়ুর নিকটবর্তী সুলুরের একটি বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করেছিল। তিনি রাজ্যের উরাহগামানরালামে অবস্থিত একটি ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজে যাচ্ছিলেন। হেলিকপ্টারটি তামিলনাড়ুর কুন্নুরের গভীর জঙ্গলের ওপর আছড়ে পড়ার পরপরই তাতে আগুন ধরে যায়। হেলিকপ্টারের ১৪ আরোহীর মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে।
একজন পুরুষ বেঁচে গেলেও তার শরীর ঝলসে গেছে। এ দুর্ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-সহ অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন। দুর্ঘটনার পর বিপিনের দিল্লির বাসভবনে তার পরিজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রাজনাথ সিং। এ ছাড়া ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানেও ওই বাড়িতে যান।
ভারতের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক : স্বাধীন ভারতের সামরিক ইতিহাসে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখার সর্বাধিনায়ক হওয়ার কৃতিত্বের পালক একমাত্র জেনারেল বিপিন লক্ষ্মণ সিংহ রাওয়াতেরই ছিল। প্রথমবারের মতো ভারতে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরি করে বিপিন রাওয়াতকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেনাপ্রধানের পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি তিনি ওই পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৫৮ সালের ১৬ মার্চ উত্তরাখন্ডের পৌড়ীর এক গঢ়ওয়ালি রাজপুত পরিবারের জন্ম বিপিনের। তার পরিবারে সেনাবাহিনীতে যোগদানের ইতিহাস পুরুষানুক্রমিক। বাবা লক্ষ্মণ সিংহ রাওয়াত ছিলেন ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল। সেই রীতি মেনেই সেনায় যোগদান রাওয়াতের। শিমলার সেন্ট এডওয়ার্ড স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে তিনি যান পুনেয়। খড়কভাসলার ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে।
এরপর দেরাদুনে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে যোগ দেন সেনার ১১ গোর্খা রাইফেলস ব্যাটালিয়নে। দীর্ঘ কর্মজীবনের বড় অংশ জম্মু ও কাশ্মীরে কাটিয়েছেন রাওয়াত। উত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল, পরম বিশিষ্ট সেবা পদকসহ একাধিক সেনা-সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
বিপিনের আগে ভারতের দুই সাবেক সেনাপ্রধান কেএম কারিয়াপ্পা এবং শ্যাম মানেকশকে অবসরের পর আলঙ্কারিক ভাবে ফিল্ড মার্শাল পদে উত্তীর্ণ করা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে স্থল, নৌ এবং বিমানসেনার সমন্বয় রক্ষার দায়িত্ব পাননি। মোদি সরকার সেনাবিধি সংশোধন করে রাওয়াতকেই প্রথম তিন বাহিনীর ‘সিঙ্গল পয়েন্ট অ্যাডভাইজর’র দায়িত্ব দিয়েছিল। অবসরের আগে রাওয়াতকেও পাঁচতারা ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করার কথা ছিল। জীবদ্দশায় সেই সুযোগ পেলেন না রাওয়াত।