ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হিজাব পরার অপরাধে এক মুসলিম নারী শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ফরাসি ভাষাভাষী কানাডার প্রদেশ কুইবেকে। বিতর্কিত প্রাদেশিক আইনের ওপর ভিত্তি করে ধর্মীয় পোশাক পরায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। খবর ডেইলি সাবাহর।
ফাতেমা আনোয়ারী ছিলেন কুইবেকের চেলসি এলেমেন্টারি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষক। তাকে স্থায়ী চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সে পদে যোগ দিয়ে দায়িত্ব পালন শুরুও করেছিলন।
যোগ দেওয়ার মাত্র একমাস পর ওই স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল আনোয়ারীকে বলেন, হিজাবের কারণে তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আনোয়ারী একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সত্যি কথা বলতে, ওই মুহূর্তে আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। এটি মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর ছিল।
কুইবেকে বিল ২১ অনুযায়ী, অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা, নার্স, শিক্ষক, পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালনের সময় কোনো ধরনের ধর্মীয় প্রতীক সম্বলিত পোশাক পরতে পারবেন না। এসবের মধ্যে রয়েছে— পাগড়ি, হিজাব, ক্রস ও টুপি।
সমালোচকদের মতে, এ আইন মুসলিম নারীদের চাকরি ও ধর্মীয় বিধান দুটি থেকে একটিকে বেছে নেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।
এদিকে হিজাব পরার কারণে কানাডায় এক নারী শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশটির জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সহায়তা চান মুসলমানরা।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম (এনসিসিএম) সোমবার জানায়, হিজাব পরার অপরাধে শিক্ষককে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর হস্তক্ষেপ চেয়ে তারা একটি আবেদনের জন্য সই সংগ্রহ করছেন। খবর ডেইলি সাবাহর।
কুইবেকে বিল ২১ অনুযায়ী, অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা, নার্স, শিক্ষক, পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালনের সময় কোনো ধরনের ধর্মীয় প্রতীক সম্বলিত পোশাক পরতে পারবেন না। এসবের মধ্যে রয়েছে— পাগড়ি, হিজাব, ক্রস ও টুপি।
এ আইন মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বলে অভিযোগ এনসিসিএম ও কানাডিয়ান সিভিল লিবার্টিস অ্যাসোসিয়েশনের। সংস্থা দুটি এ আইন বাতিলের জন্য লড়ছে।
এনসিসিএম বলছে, এ আইনের কারণে অন্যায়ভাবে ভোগান্তিতে পড়েন মুসলিম নারীরা।
এনসিসিএম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা ফারুক বলেন, ফাতেমা আনোয়ারী একজন সাহসি মুসলিম নারী। যিনি বিদ্যালয়ে হিজাব পরেছেন বলে তাকে শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো— এমন ভোগান্তিতে পড়া তিনি প্রথম বা শেষ নারী নন। বিল ২১ যতদিন আছে ততদিন এমন ঘটনা ঘটতে থাকবে।
ফারুক বলেন, এ ঘটনায় হস্তক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদনে আপনারা সই করুন। আদালতে, সংবাদমাধ্যমে, রাস্তায়— এ আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।
বিতর্কিত এ আইনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সমাধান আসতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। উল্লেখ্য কানাডার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪% ইসলাম ধর্মালম্বী।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস (এনসিসিএম) এর তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলার পর থেকে মুসলিমরা কানাডায় ইসলাম বিরোধী মনোভাবের শিকার হচ্ছেন। এর পর থেকে কানাডায় মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনাও বেড়েছে।