ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবশেষে ২সপ্তাহ পর পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়ার করা মামলা নিলো পুলিশ! সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মনোরঞ্জনের মেয়ে পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়া হাজং বৃহস্পতিবার বাদী হয়ে বনানী থানায় যে মামলা করেছেন, তাতে চালকের সঙ্গে অজ্ঞাতনামা দুজনকে আসামি করা হয়েছে৷
বনানী থানার ওসি নুরে আযম মিয়া বলেন, সড়ক পরিবহণ আইনের ৯৮ ও ১০৫ ধারায় করা মামলায় গাড়ির চালকের নাম উল্লেখ করা হয়নি৷
‘‘গাড়িটি জব্দ করার ও আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে ৷’’ তবে মামলা নিতে প্রায় দুই সপ্তাহ দেরি করার কারণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওসি৷
২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বিমানবন্দর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন মনোরঞ্জন হাজং৷ দুই দফা অস্ত্রপচারে তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে৷ তিনি বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন৷
ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) সার্জেন্ট মহুয়ার অভিযোগ, তার বাবাকে ধাক্কা দেওয়া লাল রঙের বিএমডব্লিউ গাড়িটির চালকের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে বনানী থানা মামলা নেয়নি৷ এজাহারে তিনি গাড়িচালক এবং তার ‘প্রভাবশালী' বাবার নাম তিনি লিখেছিলেন৷
মহুয়া বলেন, থানার একজন পরিদর্শক তাকে বলেন, ‘তোমার চাকরির বয়স তো অল্পদিন৷ এ সমস্ত বিষয় নিয়ে বেশি মাতামাতি করো না, বিপদে পড়ে যাবা৷ আমি তো তোমার চেয়ে সিনিয়র, আমার কথা শোনো'৷’’
যারা দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে আপোশের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান মহুয়া ৷ অবসরে থাকা মনোরঞ্জন গুলশানের এক রেস্তোঁরায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন ৷
এই দুর্ঘটনার খবর বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে৷ খবরের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ২ ডিসেম্বর রাত ২টার পর বিমানবন্দর সড়কে মোড় ঘোরার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মনোরঞ্জন হাজং৷ একটি গাড়ি এসে ধাক্কা দিলে তিনি ছিটকে পড়েন৷ মনোরঞ্জন হাজংকে উদ্ধার করে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) ভর্তি করে পুলিশ৷
গত ৩ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচার করে মনোরঞ্জনের ডান পায়ের গোড়ালি কেটে ফেলা হয়৷ পরে সংক্রমণ ছড়ায় ৮ ডিসেম্বর আবারও অস্ত্রপচার করে হাঁটুর নিচ থেকে ডান পা কেটে ফেলতে হয়৷ ষাটোর্ধ্ব মনোরঞ্জনের হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস থাকায় পরে তাকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷
গত ১৪ ডিসেম্বর যমুনা টিভিতে প্রচারিত এক ভিডিও ফুটেজে, দুর্ঘটনার পর একটি লাল রঙের বিএমডাব্লিউ গাড়ি জনতা আটক করে পুলিশে দেয়৷ সেখানে গাড়ির চালকের ছবিও দেখানো হয়৷পরে পুলিশ গাড়ীর চালককে গাড়ী সহ চলে যেতে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়ার মামলা না নেওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার আসাদুজ্জামান যমুনা টেলিভিশনকে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘বিষয়টা আমাদের সদস্যের৷ আমাদের একটা সিনিয়র কমান্ড আছে, অথরিটি আছে, সবই আছে৷ আমার তো মনে হয় যে এটা গণমাধ্যমে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না৷’’
‘‘আমাদের সহকর্মী মহুয়ার মামলা না করতে পারার তো কোনো কারণ নেই৷ এটা তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের পরেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব৷’’ বলেন পুলিশের উপ কমিশনার আসাদুজ্জামান৷
মামলার পর প্রতিক্রিয়া জানতে সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের সাথে টেলিফোন কিংবা এসএমএস-এ যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি৷