DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

বাংলাদেশকে দেওয়া কোটি কোটি ডলার সামরিক অনুদান ব্যয়ের হিসাব চায় যুক্তরাষ্ট্র

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর সামরিক অনুদান হিসেবে বাংলাদেশকে কোটি কোটি ডলার দিয়ে থাকে। কিন্তু এই অর্থ বাংলাদেশের কোন বাহিনী পায় এবং কীভাবে ব্যয় হয়, সে সম্পর্কে তাদেরকে কোনও তথ্য দেওয়া হয় না। এখন যুক্তরাষ্ট্র জানতে চাচ্ছে— তাদের দেওয়া অনুদানের অর্থ কোন বাহিনী পাচ্ছে এবং তারা কীভাবে ব্যয় করছে। এ বিষয়ে একটি চুক্তি সইও করতে চায় মার্কিন সরকার। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ওই দেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক  বলেন, ‘বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি জোরদার করা একটি স্বাভাবিক ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার অধীনে সামগ্রিক সহযোগিতা রয়েছে এবং এটি তার একটি অংশ। আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সামরিকসহ অন্যান্য সহযোগিতা ছিল, আছে এবং থাকবে।’

কেন এই চুক্তিঃ

যুক্তরাষ্ট্রে ‘লিহে’ (Leahy) নামে একটি  পুরনো আইন আছে। এর মাধ্যমে অন্য একটি দেশের কোনও নিরাপত্তা সংস্থা বা বাহিনী যদি নির্যাতন, আইনবহির্ভূত হত্যা, গুম ও ধর্ষণজনিত কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে ওই সংস্থাকে কোনও অনুদান দিতে পারে না মার্কিন সরকার।

সম্প্রতি ওই আইনে একটি সংশোধনী আনা হয়েছে এবং অনুদানপ্রাপ্ত দেশগুলোর কোন সংস্থা অনুদানের অর্থ পাচ্ছে, সেটি জানার জন্য চুক্তি করার বিষয়ে একটি ধারা সংযোজিত হয়েছে। এর ফলে মার্কিন সামরিক অনুদানপ্রাপ্ত দেশগুলোর সঙ্গে এই চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি।

এক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে— এমন কোনও সংস্থা বা বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের ওই অনুদান পাবে না।

বাংলাদেশ কি সহযোগিতা পায়ঃ

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৪০ কোটি (প্রায় ৭.৫ কোটি ডলার) টাকা অনুদান পেয়েছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে রয়েছে ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং এবং আন্তর্জাতিক মিলিটারি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। ওই ৬৪০ কোটি টাকার একটি বড় অংশ বঙ্গোপসাগরে মার্কিনিদের যে উদ্যোগ রয়েছে, সেটি শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি ‘হ্যামিলটন কাটারস’ নৌজাহাজ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে থাকে এবং বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ৫০টি ‘মাল্টি রোল আর্মাড পারসোনেল ক্যারিয়ার’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৫ থেকে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা (সাড়ে চার কোটি ডলার) ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি ২০১২ সালে ১৮ কোটি ডলার ব্যয়ে চারটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের অবস্থানঃ

যদি কোনও দেশ অনুদান দিয়ে থাকে, তবে ওই অর্থ কোথায় এবং কীভাবে ব্যয় হয়, সেটি তাদেরকে জানানো একটি যুক্তিসঙ্গত বিষয়। বিশেষ করে এ বিষয়ে যদি আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে। এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি। সবদিক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১১০ কোটি টাকা (১.৩ কোটি ডলার) মূল্যের ড্রোন দেবে বাংলাদেশকে এবং সেটি কারা ব্যবহার করবে, তা তারা জানতে চায় বলে তিনি জানান।

মার্কিন অনুদান র‌্যাব ব্যবহার করতে পারবে কিনা, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কোনও সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞা দিলে তাদের দেওয়া অনুদানের অর্থ ওই সংস্থা ব্যবহার করতে পারবে না।’

নাম প্রকাশ না করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এর সঙ্গে র‌্যাবের কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ এই তথ্য জানানোর জন্য তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি র‌্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞা নাও থাকতো, তাহলেও এই চুক্তি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোগী হতো।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুলাই মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান-র‌্যাব এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট যুক্তরাষ্ট্রের কোনও বৈদেশিক সহায়তা পাবে না।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!