DMCA.com Protection Status
title="৭

মিডনাইট হাসিনা সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিষ্ময়কর উত্থান ও দুর্নীতির উপাখ্যান

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ২০১০ সালে আপীল বিভাগে সিনিয়র আইনজীবী হওয়ার মাত্র ৪ বছরের মাথার আইন মন্ত্রনালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন এডভোকেট আনিসুল হক, অথচ এর আগে তিনি এক দিনের জন্য আওয়ামীলীগের নেতা বা কর্মী ছিলেন না।

এ যেন আলাদীনের চেরাগ প্রাপ্তি। কেবলমাত্র শেখ মুজিব হত্যা মামলা ও জেলহত্যা মামলার প্রসিকিউটর হওয়া এবং এডভোকেট সিরাজুল হকের সন্তান এই যোগ্যতায় ২০১৪ সালে বিনাভোটে সংসদ সদস্য হয়ে ৭ জানুয়ারীতে আইনমন্ত্রী হন এ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

বছরের পর বছর ধরে আওয়ামী লীগ করা ত্যাগী শত শত সিনিয়র আওয়ামী আইনজীবীরা এই রকেট গতিতে এমপি মন্ত্রী হওয়ায় শুধু আক্ষেপের চোখে চেয়ে চেয়ে দেখেছে। এরপর থেকে তৈরি হতে থাকে মন্ত্রী আনিসের দূর্নীতি, অপরাধ ও লাম্পট্যের উপাখ্যান।

২০১৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরীর অধস্তন আদালতে যতো নিয়োগ হয়েছে তার অধিকাংশেই খাতা পরিবর্তন, জালিয়াতি, পরীক্ষা না দিয়েও চাকুরী সহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুস বানিজ্য সহ পাহাড়সম অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সরাসরি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশে সাবেক সচিব (মৃত) জহুরুল হক দুলাল ও বর্তমান সচিব গোলাম সারোয়ারের তত্ত্বাবধানে।

মন্ত্রী তার নিজের প্রভাব খাটিয়ে ব্রাহ্মবাড়িয়ার সন্তান তার অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও অনুগত গোলাম সারোয়ারকে সচিব পদে বসিয়েছেন আইনবহির্ভুতভাবে, অতঃপর নির্বিঘ্নে চালিয়েছেন দুর্নীতির রামরাজত্ব।

অধস্তন আদালতের নিয়োগ কমিটিকে বাধ্য করে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় চতূর্থ শ্রেনীর প্রায় দুই হাজারের মতো কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন কেবলমাত্র একটি উপজেলা কসবা থেকে।

অথচ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট ও সরকারী চাকুরী সংক্রান্ত নিয়োগ বিধিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, চতূর্থ শ্রেনীর চাকুরীতে নিয়োগে প্রাধান্য পাবে স্থানীয় জেলার আবেদনকারীরা। অথচ আইনমন্ত্রী ও আইন সচিব এই বিধান লংঘন করে বিভিন্ন জেলায় বিপুল সংখ্যক নিয়োগ দিয়েছেন ব্রাহ্মবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বাসিন্দাদের।

অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করে বহু বিচারককে অপরাধকর্মে জড়াতে বাধ্য করেছে খোদ আইনমন্ত্রী ও সচিব। সাদাসিধা ভাব ধরে থাকা মন্ত্রী আনিসুল ও তার সচিব নিয়োগ দুর্নীতি করেই কামিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। একই সাথে আইন মন্ত্রণালয়ের রেজিষ্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট যেন মন্ত্রী সচিবের টাকার খনি। গুলশানের সাব-রেজিস্ট্রার রমজান আলীর বাড়ীও ব্রাহ্মবাড়িয়ায় যিনি গুলশান এলাকার একটি দলিল করতে ১ কোটি থেকে ৩/৪ কোটি টাকাও নেন।

ঢাকার ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাবেকুন নাহার ঢাকার বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বস্তা বস্তা টাকা কালেকশন করে তুলে দেন মন্ত্রী ও সচিবকে।

আইনমন্ত্রীর মা জাহানারা হকের ২০২১সালে মৃত্যুর আগে  দৃশ্যমান কোন আয়ের বৃহৎ উৎস না থাকলেও আলাদীনের চেরাগ বলে হয়ে গিয়েছেন সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, কেবলমাত্র তার পুত্রের টাকার খনির বদৌলতে। এর আগে বাংলাদেশের কোন আইনমন্ত্রীই কখনই কোনো ব্যাংকের মালিক ছিলেন না।

আইনমন্ত্রী-সচিবের দূর্নীতির খতিয়ান টান দিলে বহু আগেই তাদের জায়গা হতো জেলখানায়, অথচ তারা এখনও বহাল তবিয়তে আইন ও বিচার বিভাগ কুক্ষিগত করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। 

খোদ সচিব এক সময় মাদ্রাসায় পড়তো, শিবির করতো এবং সময় বুঝে ভোল পাল্টেছে, এমন কথা জনশ্রুতি আছে।

 আনিসুল হকের স্ত্রী মারা গেছে বহু বৎসর আগে। তিনি আর বিবাহ করেননি এটা দিয়ে তিনি নিজের সরলতা প্রকাশ করেন। অথচ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম মন্ত্রী আনিসুলের বান্ধবী পরিচয় দিলেও আইন ও বিচার বিভাগে তিনি মন্ত্রীর আন-রেজিস্টার্ড স্ত্রী এবং মূর্তিমান আতংক হিসাবে সবাই তাকে চিনে এবং সমীহ করে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে তদবীর, চাপ প্রয়োগ করে জামিন, ইচ্ছামত রায় নেয়া প্রায় সবই সম্ভব মন্ত্রীর এই আনরেজিস্টার্ড স্ত্রীর মাধ্যমে। কাবিননামা অনুসারে এ্যাডভোকেট তৌফিকা ব্যবসায়ী আফতাব-উল ইসলাম মঞ্জুর স্ত্রী। কিন্তু মঞ্জুর সাথে তার কাগজের সম্পর্ক ছাড়া বাস্তবে কোন সম্পর্কই নেই। বরং আইন মন্ত্রী আনিস হলো তৌফিকার সবকিছু- কাবিনবিহীন স্বামী!

বিচার বিভাগে যেকোন তদবীরে মন্ত্রীর প্রভাব ও বিপুল অংকের টাকা দিয়ে ইচ্ছামতো রায় করানোর সবচেয়ে কার্যকর সিন্ডিকেট হলো তৌফিকা চ্যানেল। শত শত কোটি টাকা লেনদেনও এদের কাছে ডাল ভাতের মতো।

আনিস-তৌফিকা সিন্ডিকেট সহ আরো কয়েকজন উচ্চ প্রভাবশালী মিলে বসুন্ধরার এমডি আনভীর কতৃক মুনিয়া হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। সিটিজেন ব্যাংকে মন্ত্রী চেয়ারম্যান আর পরিচালক বানিয়েছেন তৌফিকাকে, আর বর্তমানে এই তৌফিকাই হলো চেয়ারম্যান।

অথচ আইনমন্ত্রী না হলে এই সাধারণ মানের আইনজীবীর ভাল লাইফ-স্টাইল মেনটেইন করার খরচ যোগানও অসম্ভব ছিল। তার পরিচালক হওয়ার টাকার বৈধ উৎস ওকালতি এটা অসম্ভব প্রায়। বসুন্ধরার মামলায় শত শত কোটি টাকা ঘুষ খেয়ে ইচ্ছামত রায় দেয়ানোর অভিযোগের আঙ্গুল খোদ আইনমন্ত্রী ও তৌফিকার দিকে। অধীনস্ত একাধিক নারীর সাথে মন্ত্রী আনিসুলের গোপন সম্পর্ক ও কেলেঙ্কারীর কথা মন্ত্রণালয়ে সবার মুখে মুখে। একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন করলে মন্ত্রীর নিয়োগ বানিজ্য ঘুষ ও তদবীর বানিজ্য, নারী কেলেংকারীর সকল তথ্য অতি সহজে বেরিয়ে আসবে। মন্ত্রীর অনুগত সচিবের সকাল শুরু হয় বিভিন্ন আদালতে ফোন করে মামলায় তদবীর করার মধ্য দিয়ে।

মন্ত্রী আনিসুল তার ছোট ভাই আরিফুল হক রনির কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি পাচার করেছিলেন শত শত কোটি দুর্নীতির টাকা। ২০১৭সালে যুক্তরাষ্ট্রে রনির মৃত্যুতে তার স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান আমেরিকাতেই বসবাস করছে। সাম্প্রতিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর আনিসুল হক তার দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া সম্পদগুলো ম্যানেজ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেতে না পেরে যথেষ্ট চিন্তিত আছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!