DMCA.com Protection Status
title="৭

চাঁদপুর বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে ৩৬০কোটি টাকা লোপাটের চেষ্টায় ডা.দীপুমনি!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাঁবিপ্রবি) স্থাপনের জন্য জমি কেনায় মিডনাইট হাসিনা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপুমনির প্রত্যক্ষ যোগসাজসে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা লোপাটের প্রক্রিয়া করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁবিপ্রবি’র অধিগ্রহণ করতে বাজার মূল্য মাত্র ১৩ হাজার টাকা শতাংশের জমি ২ লাখ ৮১ হাজার টাকায়, ২৩ হাজার টাকার জমি ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, ৩৮ হাজার টাকার জমি ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা, ৩৩ হাজার টাকার জমি ২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা দাম দেখানো হয়েছে। অদৃশ্য শক্তির প্রভাব খাটিয়ে কম দামের জমি আকাশছোঁয়া দাম ধরে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের পথ তৈরি করা হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বদ্যিালয়ের জন্য যাদের কাছ থেকে বেশি দামে জমি কেনা হয়েছে সেই ভূমি মালিকদের বেশির ভাগই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজন। তবে দাম অস্বাভাবিক হওয়ায় এই প্রক্রিয়াকে আটকে দিয়েছেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছেন। জমি কেনায় অস্বাভাবিক দামের বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

ভূমি মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য খসড়া আইন পাস হয় এবং ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়। একই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২০ গেজেট প্রকাশিত হয়। ২০২১ সালে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। ৬২ দশমিক ৫৪৯০ একর জমি কেনার জন্য দরপত্রও দেয়া হয়।

অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত ভূমির মূল্য দেখানো হয়, নাল জমির প্রতি শতাংশে ২ লাখ ৮১ হাজার ৭১৭ টাকা, পুকুর/ডোবা শ্রেণির শতাংশ ৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৪ টাকা, বাড়ী/বাগান শ্রেণির শতাংশ প্রতি মূল্য ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮১ টাকা, ভিটি শ্রেণির শতাংশ ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৫ টাকা। অথচ লক্ষ্মীপুর মৌজায় সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নির্ধারিত বাজার মূল্য অনুযায়ী নাল শ্রেণি শতাংশ প্রতি ১৩ হাজার ৮০২ টাকা, বাগান/বাড়ী শতাংশ প্রতি ২৩ হাজার ৯৬৬ টাকা, পুকুর/ডোবা শতাংশ প্রতি ৩৮ হাজার ৯৫৬ টাকা, ভিটি শতাংশ প্রতি ৩৩ হাজার ২৯৪ টাকা।
প্রতিবেদনে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন উল্লেখ করেন, লক্ষ¥ীপুর মৌজার মূল্যের থেকে নাল শ্রেণির ভূমি হস্তান্তর গড় মূল্য ২০২০ সালের ১৮ মে হতে ২০২১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত ১২ মাসে ২০ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই মৌজার ভূমি হস্তান্তর মূল্য চরম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতিয়মান হয়।

সংগৃহীত মূল্যহার চরম অস্বাভাবিক প্রতীয়মান হওয়ায় অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর জেলার কাননগো ও সার্ভোরগণের সমন্বয়ে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাকে উক্ত কাজের সমন্বয় সাধন ও মূল্যহার পরীক্ষা করে এবং জেলা রেজিস্ট্রার, চাঁদপুরকে মূল্যহার পরীক্ষা করে মতামত প্রদানের অনুরোধ করা হয়।

কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৮ সালের ১৫ মে থেকে ১৯ সালের ১৭ মে পর্যন্ত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ার পূর্বে ওই জমির মূল্য ছিল ৩৯ কোটি ২৮ লাখ ৭ হাজার ৭৮৪ টাকা। ২০১৯ সালের ১৮ মে থেকে ২০২০ সালের ১৫ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন পাসের বছর মূল্য দাঁড়ায় ১৫১ কোটি ৫৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩৮৩ টাকা। ২০২০ সালের ১৮ মে থেকে ২০২১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাসের বছর মূল্য ১৭০ কোটি ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৭০০ টাকা। অথচ এই ভূমির মূল্য ধরা হয় ৫২৯ কোটি ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৩ টাকা।

প্রতিবেদনে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন উল্লেখ করেন, লক্ষ্মীপুর মৌজার মূল্যের থেকে নাল শ্রেণির ভূমি হস্তান্তর গড় মূল্য ২০২০ সালের ১৮ মে হতে ২০২১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত ১২ মাসে ২০ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই মৌজার ভূমি হস্তান্তর মূল্য চরম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতিয়মান হয়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অধিগ্রহণ নোটিশ জারির পূর্বের ১২ মাসের সকল দলিল বিবেচনায় নিয়ে মোট প্রাক্কলন দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি ৭ লাখ ৭ হাজার ২৯০ টাকা। পক্ষান্তরে একই সময়ে অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত ও পূর্বে অধিগ্রহণকৃত দাগ ব্যতীত দলিল বিবেচনায় নিয়ে মোট প্রাক্কলন দাঁড়ায় ১৯৩ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৭ টাকা।

জেলা প্রশাসকের চিঠিতে বলা হয়, অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত দাগসূচির ভূমির হস্তান্তর ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এর মাধ্যমে ভূমির মূল্যহার চরম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং এতে সরকারের অর্ধিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার ৭৮২ টাকা।

ভূমি অধিগ্রহণের দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন পাসের পর চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় জমি কেনা শুরু করেন শিক্ষামন্ত্রীর কয়েকজন আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠরা। এর মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর বড় ভাই জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ২০২০ সালের ১৫ জুন দলিল নং ২৩১৭-এ দশমিক ১৬ একর নাল জমি, দলিল নং ২৪১৪-এ একই বছর ৮ জুলাই দশমিক ২২ একর, দলিল নং ২৪৮৮-এ একই দিন দশমিক ২২ একর, দলিল নং ২৫২২-এ ৯ জুলাই দশমিক ০৮ একর, দলিল নং ২৬১৪-এ ১৩ জুলাই দশমিক ২৬ একরসহ মোর্ট দশমিক ৯৯ একর বা ৯৯ শতাংশ জমি কেনেন।

শিক্ষামন্ত্রীর মামত ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম ২০২০ সালের ২১ জুলাই হতে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দলিলে ১ দশমিক ৬১ একর জমি কেনেন। শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত (ওই এলাকার মানুষের মতে) সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানের নামে একই সময়ে বিভিন্ন দলিলে ১ একর জমি কেনেন। মন্ত্রীর আরেকজন ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত (এলাকার মানুষের মতে) লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খান তার নিজ নামে, তার মেয়ে পিংকী আক্তার, ছেলে শাহিন খানের নামে ২০২০ সালের ৮ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কয়েক একর সম্পত্তি কেনেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, এটি সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধের কোনো বিষয় নয়। অভিযোগে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। শুধু একটি অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে।
ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেশ কিছু দলিল দেখানো হয়েছিল যেগুলোতে মূল্য অধিক দেখানো হয়েছে। ডিসি অধিক মূল্যের দলিল বাদ দিয়ে আইন অনুযায়ী প্রাক্কলন চালিয়েছে। আমরা প্রতিবেদনটা চেয়েছিলাম। প্রতিবেদন দেখে বোঝা গেছে যে, তিনি সঠিক কাজই করেছেন। তখন মন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে ডিসির প্রতিবেদন অনুমোদন করে দিয়েছি। ডিসির প্রাক্কলন সঠিক।

অস্বাভাবিক দামের বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা আছি স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য। নিজের আখের গোছাতে বসিনি।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে ফোন করলে উনি কল কেটে দেন। এসএমএস দিলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!