ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের হাসিনা সরকার, র্যাব এবং পুলিশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত ২০ জানুয়ারি ইইউ সংসদের প্রভাবশালী এমপি স্লোভাকিয়ার স্টেফানেক ইভান এ চিঠি দেন। আইনের শাসন না থাকা, বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং দুর্নীতির মতো ইস্যুগুলোর উল্লেখ করে তিনি নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করেছেন। স্টেফানেক ইভান একই সঙ্গে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক সাব কমিটির সদস্য। ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। চিঠিতে তিনি সম্প্রতি র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কথা তুলে ধরেতিনি আরো লিখেছেন, উল্লিখিত বিষয়ে আমি আপনার কাছে অনুরোধ করবো, আপনার ক্ষমতা ব্যবহার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সংক্ষেপে র্যাব-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে সহায়ক হোন। আমি বাংলাদেশ পুলিশ ও সরকারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ায় সাহায্য চাইছি। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল মাঝে মাঝেই অমানবিক ‘প্র্যাকটিস’ ব্যবহার করে, যা এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রিপোর্ট করেছে। এর মধ্যে আছে নির্বাচনের ফল জালিয়াতি করা অথবা রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনপীড়ন করা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে স্টেফানেক ইভান বলেন, বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে। বিশেষ করে এক্ষেত্রে ২০১৮ সালের মে মাসে টেকনাফে কাউন্সিলর আকরামুল হককে হত্যার প্রসঙ্গ রেফারেন্স হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই জোসেফ বোরেলকে চিঠিতে স্টেফানেক ইভান লিখেছেন, অনেক বছর ধরে র্যাবের বিরুদ্ধে বারবার নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সিনেট পরিষদ। বাংলাদেশে ভয়াবহ দুর্নীতি রয়েছে। আর পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। দুর্ভাগ্যজনক হলো- আরেকটি উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান, তা হলো বাংলাদেশি বহু নাগরিক নিখোঁজের। এ সংখ্যা কয়েক শত, ৫ শতাধিক।
নাগরিকদের একটি গ্রুপ এ সংখ্যা প্রামাণ্য হিসেবে তুলে ধরেছে। আরো দুঃখজনক বিষয় হলো, অনেক নিখোঁজ ব্যক্তিকে পরে পাওয়া গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, তখন তাদের দেহে কোনো প্রাণের চিহ্ন নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করছে জাতিসংঘ।
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের এ সদস্য বলেছেন, এর আগে বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ফলে মুক্তভাবে কথা বলার স্বাধীনতার কণ্ঠ রুদ্ধ করা হয়েছে। অনলাইনে ভিন্ন মতাবলম্বীদের অপরাধী বানানো হয়েছে এবং লঙ্ঘন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক আইন।
এক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটসের বিবৃতি উদ্ধৃত করেন স্টেফানেক ইভান। তা হলো- এসব নিয়ম লঙ্ঘনের মধ্যে আছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ১১৩৪টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় নির্যাতনকে। স্টেফানেক ইভান বলেছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশের তকমা থেকে উন্নতি ঘটবে বাংলাদেশের। পার্শ্ববর্তী অনেক দেশকে পেছনে ফেলছে এ দেশটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, দেশটির এ উন্নতির সঙ্গে চিহ্নিত হয়ে আছে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতি।
বেদনার সঙ্গে আমাকে বলতেই হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে দমন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, সংবাদ মাধ্যম আছে আতঙ্কে। রাজনৈতিক বিরোধীদের করা হয় অপমান। ফলে এ পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। আর এ জন্যই আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে।