ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃবিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে সরকারদলীয় নির্লজ্জ অপপ্রচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ওয়াশিংটন-ব্রাসেলসসহ কয়েকটি দূতাবাসের সাম্প্রতিকালের অপেশাদারি কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে বুধবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার চলমান অপতৎপরতার সর্বশেষ প্রমাণ হচ্ছে, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস ক্যাডার সমন্বয়ে গঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলীয় তৎপরতা। পৃথিবীর দেশে দেশে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষা দেওয়াই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব দূতাবাসের দায়িত্ব।’
‘জনগণের ট্যাক্সের টাকায় ওইসব দূতাবাসের সব ব্যয় রাষ্ট্র বহন করে এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায়ই সব দূতাবাসের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বহন করা হয়। অথচ কী নির্লজ্জ ও অপেশাদার উপায়ে সেই প্রতিষ্ঠানকেও দলীয়করণ করে জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজে লাগানো হচ্ছে, মিথ্যাচার ও প্রতারণা কাজে লাগানো হচ্ছে।’
গত ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকসের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের ‘বিকৃত’ ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়াশিংটন দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, ‘তার (গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকস) বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে শুধু সচেতন মানুষের সঙ্গেই প্রতারণা করেনি, ওয়াশিংটন দূতাবাস বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চরমভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। কারণ আপনারা সবাই জানেন, ইতোমধ্যে কংগ্রেসম্যান মিকস নিজেই গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে নাকচ করে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, তার নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন এফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।’
‘মার্কিন হাউস অব ফরেন এফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে তিনি সুস্পষ্টভাবে র্যাব এবং সংস্থাটির বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তারদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আমি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দৃঢ় করা আমি সবসময় সমর্থন করব। আগামী নির্বাচন অবাধ ও তার সুষ্ঠু নিশ্চিতকরণসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য কাজ করব।’
বেলজিয়াম দূতাবাসের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত একটি বেসরকারি সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে সেখানে অবস্থিত দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। আপনারা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি এখনো দেখতে পাবেন। যেখানে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মীর মতো বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যা দূতাবাসকে রাষ্ট্রের বদলে আওয়ামী লীগের প্রচার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রমাণ।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশে বসবানরত বাংলাদেশি একাডেমিশিয়ান, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীরা যখন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি, নির্বাচনের অনিয়ম, জনগণের ভোটাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে সামগ্রিক হতাশাজনক পরিস্থিতি জনগণের সামনে অথবা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে বই অথবা প্রচারপত্র বা আলোচনার উদ্যোগ নেন তখনই এই সরকার তার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর শক্তিকে ব্যবহার করে, তার নিজস্ব বাহিনীকে ব্যবহার করে এসব অপকর্মকে ঢাকার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসসহ বিভিন্ন দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডে আবারো এটাই প্রমাণিত হলো।’
এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন শহরের কর্মকর্তারা সরকারি দলের অনুষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত থেকে দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করছেন। যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাকে ধুলিসাত করেছে। পেশাদারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হলেও মৌন থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকার মিথ্যাচার করছে, তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দলীয় কাজে ব্যবহার করছে। আমরা আজকে স্পেসিফিক (নির্দিষ্ট) উদাহরণ দিয়ে বলছি, তারা (সরকার) ওয়াশিংটনে কী করছে, ব্রাসেলসে কী করছে, বিভিন্ন জায়গা কী করছে?’
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্র ও জনগণের সুরক্ষা এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করতে। এখন তারা কাজ করছে একটা দলের জন্য। অনেক উদাহরণ আছে, সবকিছু একদিনে বলা যাবে না।’
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।