ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন নিশিরাতের হাসিনা সরকার বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে গুম করেছে। অসংখ্য মানুষকে খুন, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার করা হয়েছে। বাংলাদেশে অব্যাহত গুম খুনের ব্যাপারে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।
এমনকি গুম বিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ, বাংলাদেশে গুম অপহরণের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখতে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরের অনুমতি চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন জানিয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ এপ্রিলে বাংলাদেশকে সফরের অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু ওয়ার্কিং গ্রুপে কোনো আবেদনেই বাংলাদেশ সাড়া দেয়নি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশে গুম অপহরণ বন্ধে বিএনপি বারবার সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে আসছিল। কিন্তু ক্ষমতার লোভে নিশিরাতের সরকার গুম, খুন, অপহরণ বন্ধে দেশের কিংবা বিদেশের কারো কোনো কথায় গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ক্ষমতা লিপ্সায় র্যাব-পুলিশকে গুম-খুনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে ফেলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে গুম বিষয়ক জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ১২৬তম বৈঠক। বৈঠক চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় বাংলাদেশসহ বিশ্বের হাতেগোনা আরো কয়েকটি দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপকর্ম গুমের অভিযোগ পর্যালোচনা।
যেহেতু বর্তমান সরকার গুমের সঙ্গে জড়িত, সেই কারণে তারা গুম নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপিত অভিযোগ গায়ে মাখে না। কিন্তু কথায় বলে, চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। খুনিদের বিদেশে পালানোর পথ রুদ্ধ হয়ে আসতে থাকায় একইসঙ্গে দেশে জনরোষের ভয়ে নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রীরা উদ্ভট কথাবার্তা বকতে শুরু করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জাতিসংঘ নয়, জাতিসংঘের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের একটি তালিকা দিয়েছিল। পরে দেখা গেল, ভূমধ্যসাগরে অনেক লোকের সলিল সমাধি হয়েছে।’ একই দিনে অবৈধ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। যেখানেই গুম হচ্ছে, সেখানেই আমরা কিছুদিন পরেই তাকে পাচ্ছি। নানা কারণে আত্মগোপন করে থাকে, সেগুলোকে গুম বলে চালিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশে কেউ গুম হয় না।” অথচ রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো যে গুমের সঙ্গে জড়িত, সেই সব ঘটনার অনেক প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন। ভিডিও ফুটেজ আছে।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন থেকেও গুমের ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা তদন্ত করে জাতিসংঘে গুমের প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গুমের শিকার ৮৬ ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করে তাদের বিষয়ে 'যেখানে কোনো আলো পৌঁছায় না: বাংলাদেশে গুমের এক দশক' শিরোনামে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
রিজভী বলেন, স্বজনদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে তারা বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা অসংখ্যবার আবেদন করলেও গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের প্রিয়জনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে দুই মন্ত্রীর এই ধরনের উপহাস খুবই নিষ্ঠুর, অশালীন ও বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। বিরোধী শক্তিকে দমন করতে অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারের গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, নিপীড়নের কথা আজকে বিশ্ব দরবারে প্রমাণিত। তাই ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকারের মন্ত্রীরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে এসব অবিবেচনা প্রসূত, ঘৃণ্য বক্তব্য দিচ্ছে। নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মন্ত্রীদের মতো গুম-খুন নিয়ে অবাস্তব, আজগুবি ও নিষ্ঠুর পরিহাসমুলক মন্তব্য করে আসছেন।
রিজভী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতেই গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। গোটা জাতিকে গুম-খুনের নিষ্ঠুর নির্যাতনে ‘খাঁচাবন্দী’ করে রেখেছে। প্রশ্ন হলো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি মনে করেন, 'গুমের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত নয়' তাহলে তাকেই জবাব দিতে হবে গুমের সঙ্গে কারা জড়িত ? কে বা কারা একের পর এক মানুষ গুম খুন করছে ? গুমের তালিকায় থাকা কোন কোন ব্যক্তির ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি হয়েছে ? আমাদের দলের নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ শত মানুষকে ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার গুম করেছে। তাদের কার কার ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে এর জবাব বিনাভোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিতে হবে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট যে, গুম হওয়া বা তার ভাষায় ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা তার কাছে আছে। অবিলম্বে সেই তালিকা প্রকাশ করা হোক।
এ সময় ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে এ ধরণের অমানবিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানান রিজভী।