ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে মিডনাইট হাসিনা সরকারের বিশেষ অনুরোধে গ্রেফতার করেছে মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য তিনি গত ১২ বছরের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন৷ তার বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালের জেলহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে৷ বুধবার মালয়েশিয়ার আমপাং, সেলাঙ্গর এলাকার একটি আবাসন থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে, বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে৷
খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের খবরটি নিশ্চিত করেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিন৷ বৃহস্পতিবার মালয়েশীয় দৈনিক ‘দ্য স্টার' এই খবর প্রকাশ করেছে৷
হামজা জাইনুদিন জানিয়েছেন, নিয়ম মেনে খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এবং গ্রেপ্তারের বিষয়ে বাংলাদেশের তরফে অনুরোধ করা হয়েছিল, এ কথা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ যদিও এ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কোনও বক্তব্য মেলেনি এখনও৷ কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ মিশনও এই প্রসঙ্গে কোনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দেয়নি৷
চার দলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা৷ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সরকার দেশে ফিরতে বলেছিল খায়রুজ্জামানকে৷ তার বাংলাদেশি পাসপোর্টও বাতিল করা হয়েছিল৷ কিন্তু বিপদের আঁচ টের পেয়ে ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী কার্ড নিয়ে তিনি মালয়েশিয়ায় থেকে যান৷
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ চার সঙ্গীকে৷ স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়া চার জন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে হত্যা মামলার আসামি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর৷ যদিও পরে তিনি সেই মামলা থেকে অব্যাহতি পান৷
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ৷ ফিলিপিন্সের দায়িত্বে থাকা খায়রুজ্জামানকে তখন বাংলাদেশে ডেকে পাঠানো হয়েছিল৷ সেই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ বাধ্যতামূলক অবসরও দেওয়া হয়েছিল খায়রুজ্জামানকে৷
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামাত জোট৷ সেই সময়ে জামিনে মুক্তি পান খায়রুজ্জামান৷ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেই সময়ের সেনাকর্তা খায়রুজ্জামান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছিলেন৷ ২০০৩ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল তাকে৷বিএনপির আমলে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন৷
২০০৪ সালে জেলহত্যা মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল আদালত৷ ২০০৭ সালে হাই কমিশনার পদে নিয়োগ করে তাকে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়েছিল৷ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরতে বললেও তিনি ফেরেননি৷ জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ডের মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে থাকছিলেন৷