ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে অবদান ছিল তা মুছে ফেলা হয়েছিল। সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না, ইতিহাস ঠিকই বার বার ফিরে আসে।’
আজ রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশিষ্ট নাগরিকদের হাতে একুশে পদক তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে পদক প্রাপ্তদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘গবেষণা, সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন এসব ক্ষেত্রে যারা অবদান রাখছেন…আমি জানি সবাইকে আমরা (সম্মাননা) দিতে পারি না। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে যারা এক সময় অবদান রেখেছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো হারিয়েও যাচ্ছিলেন আমরা তাদেরও খুঁজে বের করে সম্মান জানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। এতে করে ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে আমাদের দেশের মানুষ মুক্তি পায়।’
দেশের তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে চলেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই অর্থনীতিভাবে সাবলম্বিতা অর্জন করতে। আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি যেন আন্তর্জাতিকভাবে আরো বিকশিত হতে পরে সেটাই আমাদের চেষ্টা থাকবে। সেই প্রচেষ্টাতেও আমরা সফলতা অর্জন করবো বলে আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গুণীজনরাই আমাদের পথ দেখান। আপনাদের অবদান বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যার জন্য আমাদের এই অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। তাই সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন দেশের কল্যাণে কাজ করে, সেটাই আমি চাই।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পদক তুলে দেন। এ বছর ভাষা আন্দোলনে দুজন, মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে চারজন, শিল্পকলায় সাতজন, ভাষা ও সাহিত্যে দুজন, সমাজসেবায় দুজন, গবেষণায় চারজন (দলগতভাবে তিনজন) একুশে পদক পেয়েছেন। এছাড়া সাংবাদিকতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষায় একজন করে পদক পেয়েছেন।
পদক বিজয়ীরা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছ থেকে নিজ নিজ পদক গ্রহণ করেন এবং মরণোত্তর একুশে পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যরা এ পদক গ্রহণ করেন।
ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পদক পেয়েছেন মোস্তফা এম এ মতিন (মরণোত্তর) ও মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল (মরণোত্তর)। এম এ মতিনের পক্ষে তার কন্যা সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা ও তোফাজ্জল হোসেন মুকুলের কন্যা মির্জা নাহিদা হোসেন বন্যা পদক গ্রহণ করেন।
শিল্পকলায় পদক পেয়েছেন জিনাত বরকতউল্লাহ (নৃত্য), নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর) (সংগীত), ইকবাল আহমেদ (সংগীত), মাহমুদুর রহমান বেণু (সংগীত), খালেদ মাহমুদ খান (খালেদ খান) (মরণোত্তর) (অভিনয়), আফজাল হোসেন (অভিনয়), মাসুম আজিজ (অভিনয়)। খালেদ মাহমুদ খানের পক্ষে তার কন্যা ফারহিন নুসরাত খান জয়িতা পদক নেন।
মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (মরণোত্তর), কিউ এ বি এম রহমান, আমজাদ আলী খন্দকার পদক পেয়েছেন। সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর ছেলে সৈয়দ নাজিব মুজতবা পদক গ্রহণ করেন।
এছাড়া সাংবাদিকতায় এম এ মালেক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মো. আনোয়ার হোসেন, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের হাতে একুশে পদক তুলে দেওয়া হয়েছে।
সমাজসেবায় একুশে পদক জিতেছেন এস এম আব্রাহাম লিংকন ও সংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের। কবি কামাল চৌধুরী ও ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে পদক পেয়েছেন।
এছাড়া গবেষণায় ড. মো. আবদুস সাত্তার মন্ডল এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবনের জন্য দলগতভাবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. মো. এনামুল হক (দলনেতা), ড. সহানাজ সুলতানা ও ড. জান্নাতুল ফেরদৌস একুশে পদক পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্ত সুধীজনে নাম ঘোষণা ও পরিচিতি পাঠ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর।