ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু একটি বিষয় সবকে লক্ষ্য রাখতে হবে-যখনই বাঙালি কিছু পায় বা মর্যাদা অর্জন করে বা উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, তখনই অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আবার আমাদেরই এ বাঙালির মধ্যেই কিছু থাকবে যে, অর্জনটা তো তাদের কাছে বোধহয় মনঃপূতই হয় না। কারণ পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকতেই তারা পছন্দ করে। একটা শ্রেণি আছে তারা কখনো আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে জানে না। তারা আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দিয়েই আত্মতুষ্টি পায়।
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার বিকালে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, সেই শ্রেণিটা এখনো রয়ে গেছে আমাদের সমাজে। সেই জন্য যতই আমরা উন্নতি করি, যতই এগিয়ে যাচ্ছি, সারা বিশ্ব যখন সেই উন্নয়ন দেখে আমাদের দেশের কিছু লোক কিন্তু সব সময়, চিরদিন অন্ধই থাকে। তারা আর তা দেখে না। এই অর্জনের কথা বলতে গেলেও যেন তাদের একটা দ্বিধা। কেন তাদের ভেতরে এ ধরনের মানসিকতা? আমার প্রশ্ন- কেন? এটা আমার কাছে অবাক লাগে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা কিন্তু একটা কথা বলতেন-‘বাংলাদেশের মাটি এত উর্বর, এখানে যেমন অনেক ফসলও হয়, আবার সেখানে পরগাছা, আগাছাও জন্মে।’ এ আগাছা থাকবে, এটা ঠিক। কিন্তু আগাছা কী করতে হবে, সেটা বোধহয় বাঙালির নিজেদেরই ভাবতে হবে। কারণ, আমাদের স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে চাই। শিক্ষায়-দীক্ষায়, সাংস্কৃতিক চর্চায় সবদিক থেকে বাঙালি নিজের মর্যাদা নিয়ে স্বমহিমায়, সগৌরবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে, এটাই আমাদের কামনা। এটাই আমরা চাই। আর ভাষাশহিদের প্রতি, জাতির পিতার প্রতি-এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
পঁচাত্তরের পরে ভাষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, পাকিস্তান আমলে যেমন আমাদের সংস্কৃতির ওপর আঘাত এসেছিল। ১৫ আগস্টের পরে ঠিক তেমনটাই আবার আমরা দেখলাম। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম ভাষা আন্দোলন ও আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হলো। যে ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল, সেই ভাষণও এখানে নিষিদ্ধ ছিল। এবং খুনিদের পুরস্কৃত করা হলো। তাহলে এরা কারা? এরা তো সেই পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, খুনিরাই।
কিন্তু জাতির পিতা বলেছেন-‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। বঙ্গবন্ধুর কারনেই ৫২তে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় । আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী পালন করছে। এটা বাঙালিই একটা মর্যাদার আসন অর্জন করা।
ভাষা আন্দোলনের চেতনা এবং বর্তমানে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, কোনো সংগ্রাম এবং রক্তদান কখনো বৃথা যায় না, বৃথা যেতে পারে না। যদি সততার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া যায়, যে কোনো অর্জন করা সম্ভব। আর সেই অর্জনটা আমরা করতে পেরেছি।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে বারবার কারাবন্দি হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কারাগারে বন্দি থেকেও বঙ্গবন্ধু নিশ্চুপ থাকেননি। তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে গেছেন। যখনই মুক্তি পেয়েছেন তিনি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন এবং জনতাকে বিশেষ করে সংগঠিত করেছেন। ভাষা আন্দোলনের জন্য ছাত্রদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় গোপন বৈঠক করেন। অনশন করেছেন। বন্দি থেকেও ছাত্র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তৎকালীন গোয়েন্দা রিপোর্টে বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তৎকালীন ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্টে বঙ্গবন্ধুর নামে রিপোর্ট এসেছে, তিনি ছাত্রদের উসকে দিচ্ছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আঁতেল শ্রেণি কখনো এগুলোকে মূল্যই দেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন এ রিপোর্টগুলো পেলাম এবং আমি এবং আমার বান্ধবী বেবি মওদুদ পড়ে তথ্যগুলো পেয়ে গেলাম। এরপর বাংলা একাডেমিতে একটা ভাষণে আমি এই বক্তৃতা দিয়েছিলাম। আমার এ ভাষণের পর বদরুদ্দিন ওমর আমার বিরুদ্ধে একটা বিরাট আর্টিকেল লিখল যে-এসব কথা নাকি আমি বানিয়ে বানিয়ে বলেছি। কারণ ভাষা আন্দোলনে কোনো অবদান নাকি শেখ মুজিবের নেই! কিন্তু ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট তো শেখ মুজিবের বিরুদ্ধেই আছে। আর কারও বিরুদ্ধে তো এত নাই। ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্টগুলো যদি আমি প্রকাশ না করতাম তাহলে তো এ তথ্যগুলো অধরাই থেকে যেত। এছাড়া অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়েও মানুষ অনেক সত্য জানতে পারছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে আপনারা দেখবেন, তিনি শুধু বন্দি নন, কারাগারের বাইরে থেকে অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যখনই যা কিছু অর্জন, সবকিছু রক্ত দিয়েই কেনা। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যে দিয়েই আমরা এগুলো অর্জন করতে পেরেছি। আজ বাংলাদেশে টানা ১৩ বছর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সেই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে, কত মানুষ জীবন দিয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন এটা হিসাব করাও কঠিন। কিন্তু আমাদের দেশে কিছু বেইমান বরাবরই থাকে যারা বাঙালিদের স্বার্থ দেখে না। বাঙালিদের স্বার্থের সঙ্গে বেইমানি করাটাই যেন তাদের চরিত্র। সেটা তখনো আমরা দেখেছি।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের কথা উচ্চারণ করে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
সভা শেষে তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। এ সময় তিনি বলেন, এখন থেকে বাংলাদেশ চিরজীবী হোক লাগবে না। জয় বাংলা স্লোগান দিলেই হবে। পরে আবারও জোরে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে তিনি সভা শেষ করেন।
গণভবন প্রান্ত থেকে সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সামসুন নাহার চাঁপা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।