DMCA.com Protection Status
title=""

ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বয়কটের সিদ্ধান্ত বিএনপির!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশঃ বাড়ছে বিএনপির।  মুক্তিযোদ্ধা ডা.জাফরুল্লাহর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপির হাইকমান্ড।

সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের পেছনে তিনি এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ দূরত্ব তৈরি হয়। সদ্য নির্বাচন কমিশন গঠনকে কেন্দ্র করে তা চরমে পৌঁছায়।

 

বিশেষ করে সার্চ কমিটিতে নাম দেওয়া এবং ইসি গঠনের পর ইতিবাচক মন্তব্য করায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয় বিএনপি। এ অবস্থায় দলের হাইকমান্ড জাফরুল্লাহকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কোনো অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ না জানানো এবং উনি কোনো অনুষ্ঠানে থাকলে সেখানে নেতাকর্মীদের না যেতে মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়। ইসি নিয়ে তার ভূমিকার পর জাফরুল্লাহকে পুরোপুরি বর্জন করতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দলের একটি অংশ মনে করছে, জাফরুল্লাহ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাকে এভাবে এড়িয়ে চলা উচিত হবে না। প্রকাশ্যে এভাবে বিরোধ বাড়লে দলই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।

জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী  বলেন, আমি থাকলে বিএনপি নেতারা অনুষ্ঠানে আসবে না বা আমাকে বর্জন করবে, সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তারা যদি মনে করে আমি থাকলে অসুবিধা হতে পারে, তাহলে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ নিয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।

তিনি বলেন, জনবিচ্ছিন্নতার কারণে বিএনপি তাদের ভুল বুঝতে পারছে না। অনুধাবন করতে পারছে না কে তাদের বন্ধু আর কে শত্রু।

জাফরুল্লাহকে বয়কটের সিদ্ধান্তের পর বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জেএসডি আয়োজিত জাতীয় পতাকা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে যাননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন। একই অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অনেকেই ধারণা করছেন এ কারণেই আসেননি বিএনপি মহাসচিব। যদিও মির্জা ফখরুলের ঘনিষ্ঠ এক নেতা  বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে বিএনপি মহাসচিব শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করছেন। অসুস্থতার কারণেই তিনি অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি।

জেএসডির অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব উপস্থিত না হওয়ায় সেখানে নানা ধরনের আলোচনা হয়। সভায় নাগিরক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না তার বক্তব্যে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজকের (বুধবার) অনুষ্ঠানের ইনভাইটেশন কার্ডে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও মির্জা ফখরুল ইসলামের নাম লেখা। এ দুটো জিনিস একসঙ্গে যাবে নাকি। বহুদিন ধরে দেখছি, যায় না। তিনি বলেন, আমি জানি না ফখরুল সাহেব কেন আসেননি। উনি অসুস্থতার কথা বলছেন, হয়তো এজন্যই আসেননি।

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মান্না বলেন, ধরেন আওয়ামী লীগ চলে গেল, ভোট হলে আপনারা ক্ষমতায় আসবেন? তিনি বলেন, লড়াই যখন শুরু করছি, সেই লড়াইয়ের মাধ্যমে যাতে জনগণের অধিকার যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, সেজন্য জাফরুল্লাহর পরামর্শ নিতেই হবে।

জানা যায়, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় জাফরুল্লাহর ভূমিকাকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে বিএনপি। বিশেষ করে সার্চ কমিটির আমন্ত্রণে গিয়ে সম্ভাব্য নাম দেওয়ার বিষয়টিকে তারা মেনে নিতে পারছেন না। তার নামের মধ্যে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালের নামও ছিল। সার্চ কমিটিতে তার দেওয়া নাম নিয়ে সেসময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপি ডা. জাফরুল্লাহর মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশনের জন্য তাদের পছন্দের নাম দিয়েছে। এরপর হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার পর ডা. জাফরুল্লাহ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেছেন, হাবিবুল আউয়াল অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান লোক এবং তার ওপর যদি সরকার অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ সৃষ্টি না করে, তিনি ভালো কাজ করবেন। সবাইকে তার সহযোগিতা করা উচিত। তার এমন সার্টিফিকেট বিএনপির জন্য বড় আঘাত হিসাবে সামনে এসেছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। জাফরুল্লাহর নাম দেওয়া এবং তার প্রস্তাবিত ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হওয়াটা শুধু যে কাকতালীয় তা মানতে নারাজ তারা। নেতাকার্মীরা মনে করেন, এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে। প্রথমত, এর মাধ্যমে বিএনপি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে নেই-এমন বক্তব্য রাখার সুযোগ কমে এসেছে। দ্বিতীয়ত, সরকারের পছন্দের ব্যক্তিকে নয়, বরং সরকারের সমালোচক ব্যক্তির পছন্দের লোককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন একটি ধারণা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

জাফরুল্লাহর এ ধরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে ২৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ বিভাগে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির কেউ নন। তিনি যা বলেছেন, তা তার নিজস্ব বক্তব্য। নির্বাচন বিষয়ে তিনি বিএনপির পক্ষে কথা বলার কেউ নন।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই তারেক রহমান ইস্যুতে ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা গণমাধ্যমে তার দেওয়া বক্তব্য সবার নজরে আসে। সরকারের নানা ব্যর্থতার বিষয় এড়িয়ে গিয়ে তিনি বারবার তারেক রহমান ইস্যুতে বেশ সোচ্চার। তার এমন বক্তব্যের পেছনে কোনো কারণ রয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে তার সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি তার সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চায়নি বিএনপি। তাকে এড়ানোর জন্য নানা কৌশল নেওয়া হয়েছে। তাকে এড়িয়ে চলার জন্য দলের নেতাকর্মীদের মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও বিএনপি সমর্থিত কিছু সংগঠন তাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিল। এখন থেকে কেউ যাতে তাকে আমন্ত্রণ না জানায়, সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কয়েক মাস আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রসঙ্গ টেনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, তারেক তুমি দুই বছর চুপচাপ বসে থাকো। পারলে বিলেতে (বিদেশ) লেখাপড়ায় যুক্ত হয়ে যাও, সেখানে বহুভাবে লেখাপড়া হয়।’ তার এমন বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে যান সভায় উপস্থিত থাকা ছাত্রদলের কয়েক নেতা। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ওমর ফারুক কাওছার সালাম ডা. জাফরুল্লাহকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি বিএনপির কে? আপনি বিএনপি নিয়ে উলটাপালটা কথা বলেন কেন?

জানা যায়, দলীয় নির্দেশ অমান্য করে ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করায় বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদ হারান জিএম সিরাজ।

জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপির অনুষ্ঠানে এসে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ দল সম্পর্কে যা খুশি তা বলবে, এটা হতে পারে না। তার কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। তিনি আসলে কাদের হয়ে কাজ করছেন, এ প্রশ্নও উঠেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!