ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা সদ্য নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলকে একদিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। জেলা কারাগার থেকে প্রাইভেটকারে থানায় আনা হলো তাকে। শত শত লোকের ভিড় সেখানে। থানা চত্বরে হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য রাখলেন রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া ওই ব্যক্তি; বললেন- আমি নির্দোষ।
সে সময় ওই আসামীর হাতে ছিল না কোনো হ্যান্ডকাপ। ঘটনাটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকূপা থানায় ঘটেছে ঘটনাটি। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ওই আসামি হলেন শৈলকূপা উপজেলার ১০নং বগুড়া ইউনিয়নের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুল। তার গ্রামের বাড়ি শৈলকূপা উপজেলার বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামে, পিতার নাম কুবাদ আলী।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি নিয়ে ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। শৈলকূপা সার্কেলের এএসপি অমিত বর্মন বলেছে, ৫ জন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলা কারাগার থেকে থানার আনার পরে সেখানে কয়েক শত জনতা জড়ো হন। এ সময় ওই আসামিদের মধ্য থেকে নব নির্বাচিত ১০নং বগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুল পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য কথা বলেছেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় এমনটি হয়েছে। ঘটনার জন্য পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার কিছুই ঘটেনি বলে দাবি করেন শৈলকূপা সার্কেলের এএসপি।
শৈলকূপা থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে যুগান্তরকে বলেন, দুপুরের দিকে এক দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান শিমুলসহ ৫ আসামিকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রিমান্ডের আসামি কীভাবে থানা চত্বরে হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য দিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কাকতালীয়ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, এলাকার শত শত মানুষ থানার গেটে আগে থেকেই ভিড় করে ছিল। তাদের শান্ত করতে শফিকুল ইসলাম শিমুল আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জড়ো হওয়া নেতাকর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন। এর জন্য পুলিশ তাকে উৎসাহিত করেনি বলে দাবি করেন ওসি।
সে সময় ওই আসামির (শিমুল) হাতে হ্যান্ডকাপ ছিল না বলে পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, শৈলকূপা উপজেলার ১০নং বগুড়া ইউনিয়নে ৫ম ধাপের নির্বাচনে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর থেকে এলাকায় বিরোধ দেখা দেয়।
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে পেঁয়াজের ক্ষেতে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় কল্লোল খন্দকার নামের এক যুবক। সে বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের মৃত আকবর খন্দকারের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার বাদী হয়ে ১২ জানুয়ারি ৮২ জনকে আসামি করে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় হুকুমের আসামি করা হয় নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলকে। মামলা দায়ের করার পরে বাদীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানীয়ভাবে বাদীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়। পরবর্তী সময়ে আফান ও সজিব নামে দুইজন আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। হুকুমের আসামি শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাসির বিশ্বাস, ফরিদ মুন্সি, আতিয়ার মিয়া, আখির মুন্সি নামে ৫ আসামি ২ মার্চ সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তৌফিক আসামিদের ৫দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালত আবেদন জানান। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই মোতাবেক শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ৫ জনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ রিমান্ডে আনা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, রিমান্ডের আসামিরা মাইক্রোবাসসহ ৩টি প্রাইভেট কারে শৈলকূপা থানাতে ঢুকছেন। এ সময় শৈলকূপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহসীন হোসেনসহ অন্যান্যরা চলাফেরা করছেন।
অভিযোগ উঠেছে এক পর্যায়ে পরিদর্শক (তদন্ত) মহসীন হোসেন তার হ্যান্ডমাইক তুলে দেন রিমান্ডের আসামি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের হাতে। কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শিমুল এবং হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য রাখার সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
রিমান্ডের আসামিদের নিয়ে এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত কল্লোল খন্দকারের ছোট ভাই (হত্যা মামলার বাদী) মিল্টন খন্দকার। তিনি অভিযোগ করেন, এমন ঘটনায় আমরা ন্যায় বিচার পাবো বলে মনে করছি না। কল্লোল খন্দকার খুন হওয়ার পর থেকে পরিবারের সদস্যসহ তিনিও বাড়ি ছাড়া বলে জানান মিল্টন।
পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শৈলকূপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহসীন হোসেন বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে আসামির হাতে হ্যান্ডমাইক তুলে দেয়া হয়েছিল।