DMCA.com Protection Status
title=""

কন্যা পুতুলকে নিয়ে শারজাহ কোর্টে অর্থ পাচার দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিলেন শেখ হাসিনা!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সংযুক্ত আরব আমিরাত সফররত বাংলাদেশের মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁর নিজ নামীয় লাল পাসপোর্ট সারেন্ডার করে শারজাহ ‍সিভিল কোর্টে অর্থ পাচার দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিলেন।
 বুধবার ৯ই মার্চ স্থানীয় সময় পৌনে তিনটার দিকে শেখ হাসিনা ও তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে শারজাহর ইমিগ্রেশন অফিসে নেয়া হয়। সেখানে তাঁদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করে পিটিশন সহ বিশেষ বাহক মারফত শারজাহ সিভিল কোর্টে পাঠানো হয়।

৫২৫১ নম্বর মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তাঁর কন্যা পুতুলও একই মামলায় হাজিরা দেন। ক্রিমিনাল এটর্নী মুস্তাফার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের এটর্নী টিম তাদের শুনানী করেন।  বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল মোমেন এসময় উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং তার কন্যাকে এসময় ভীষণ আতঙ্কিত দেখা গেছে। শুনানীতে শেখ হাসিনার এটর্নীরা দাবী করে, পাচারকৃত অর্থ তাদের নয়, বরং ১ নম্বর আসামী খন্দকার মাসরুর হোসাইন মিতুর (পুতুলের সাবেক স্বামী) চাচা খন্দকার বাবরের, এবং তাকে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অত্যন্ত কড়া গোপনীয়তার সাথে এই ভিভিআইপির হাজিরা সম্পন্ন হয়। এতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা। অবশ্য আগেই থেকেই জানাজানি হয়ে যায় যে, বাংলাদেশের বিশেষ আসামীকে আদালতে নেয়া উপলক্ষে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও আদালতে কড়াকড়ি থাকবে। তদুপরি প্রুচুর সংখ্যক বাংলাদেশীরা আদালত এবং আশেপাশের এলাকায় জড়ো হয়।

আবুধাবী ও দুবাইয়ের শাসকদের এবং কাতারের যুবরাজের অনুরোধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জন্য এই বিশেষ পাসপোর্ট হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়। অবশ্য এটি আমিরাতে একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। তাছাড়া বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর উপস্থিতির কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ব্যক্তিগত হাজিরার পরিবর্তে এই পাসপোর্টে জমা দিয়ে হাজিরা অনুমোদন করে আদালত।

২০২০ সালের জানুয়ারী মাসের ৭ তারিখে ৬৮০ মিলিয়ন ইউরো সহ আরব আমিরাতের শারজাহতে গ্রেফতার হন শেখ হাসিনার মেয়ের জামাই খন্দকার মাসরুর হোসেন মিতু। এই গ্রেফতারের খবরটি তখন  বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ ডট নেট পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

 ঐ সময় মামলা হওয়া ঠেকাতে শেখ হাসিনা খুব দ্রুতই ছুটে যান আবুধাবী (১১ জানুয়ারী ২০২০)। কিন্তু তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এমনকি আরব আমিরাতের জাতির মাতা শেখা ফাতিমাকে ‘মা’ ডেকে তাঁর মাধ্যমে তদবীর চালিয়েও কোনো সুবিধা করতে পারেননি।

এর কারণ, শারজাহতে কঠোর শরীয়া আইন বিদ্যমান এবং শারজাহ এর শাসক শেখ সুলতান বিন মুহাম্মদ আল কাসিমি নিয়মনীতিতে খুবই কড়া, দ্বিতীয়ত শারজাহ শাসকের সাথে কেন্দ্রের শাসকের সম্পর্ক ভালো না। ফলে শেখ হাসিনা দুবাই বা আবুধাবীর শাসকের মাধ্যমে তদবীর চালিয়ে কোনো সুবিধা করতে পারেননি। তাছাড়া ঢাকাস্থ আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আলমেহিরিকে তদবীর করতে আবুধাবী পাঠান, কিন্তু কেনো লাভ তো হয়ইনি, উল্টো রাষ্ট্রদূত চাকরি হারিয়েছেন।

অবশেষে অর্থ পাচার সহ বেশ কয়েকটি মামলা হয় মিতুর নামে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে মিতু জানান, পাচারকৃত ঐ অর্থের প্রকৃত মালিক তিনি নন, এর প্রকৃত মালিক তার শ্বাশুড়ি শেখ হাসিনা এবং তার স্ত্রী পুতুল। ফলে তাদেরকে সহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। শ্বাশুড়ির নাম বলে দেয়ায় হাসিনা চাপে পড়ে যায়, এবং অবশেষে মিতুর সঙ্গে তার কন্যার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে হয়।

আসামী তালিকায় ঢোকার পর থেকে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও বিভিন্ন মন্ত্রীদের পাঠিয়ে অনেক চেষ্টা তদবীর চালান, এবং ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভিভিআইপি বিবেচনায় একটি বিশেষ ব্যবস্থায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মামলায় হাজিরা দিতেন। ৫/৬ দফা এভাবে হাজিরা দিলেও শেষের দিকে তিনি গর হাজির থাকেন, এমনকি হাজিরা দিতে অস্বীকৃতি জানান! ফলে আদালত বিরক্ত হয়ে তাকে সতর্ক করে। সতর্ক করার পরও একই ঘটনা ঘটান,  যা আদালত অবমাননার সামিল। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে কোর্ট চুড়ান্তভাবে নির্দেশ দেয়, ৯ই মার্চ ২০২২ তাকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, নইলে একতরফাভাবেই বিচারকার্য শেষ করা হবে। সেই হাজিরা দিতেই তিনি ৭ই মার্চ বিকালে গেছেন আরব আমিরাতে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!